‘পাকিস্তান রত্ন’ বলে সিদ্দারামাইয়াকে কটাক্ষ বিজেপির

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) “পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পক্ষে নই” মন্তব্য ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেওয়ার একদিন পর তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি কখনো বলেননি যে “যুদ্ধে…

siddaramaiah called pakistan ratna

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) “পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পক্ষে নই” মন্তব্য ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেওয়ার একদিন পর তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি কখনো বলেননি যে “যুদ্ধে যাওয়া উচিত নয়”। তাঁর এই মন্তব্যের জেরে বিজেপি নেতারা তাঁকে “পাকিস্তান রত্ন” বলে কটাক্ষ করেছেন এবং পাকিস্তানি মিডিয়ায় তাঁর মন্তব্যের প্রশংসা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন।

   

সিদ্দারামাইয়া স্পষ্ট করে বলেন (siddaramaiah)

সিদ্দারামাইয়া (siddaramaiah) স্পষ্ট করে বলেন, “আমি কখনো বলিনি যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করা উচিত নয়। আমি শুধু বলেছি, যুদ্ধ সমাধান নয়। পর্যটকদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। এটি কার দায়িত্ব? আমি বলেছি, এখানে ব্যর্থতা হয়েছে। গোয়েন্দা ব্যবস্থার ব্যর্থতা হয়েছে। ভারত সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারেনি। যুদ্ধের কথা বলতে গেলে, যদি তা অনিবার্য হয়, তাহলে আমাদের যুদ্ধে যেতেই হবে।”

এর আগে, সিদ্দারামাইয়া (siddaramaiah) বিতর্কের সূত্রপাত করেন যখন তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করার দরকার নেই। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা যুদ্ধের পক্ষে নই। শান্তি থাকা উচিত, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”

পাকিস্তানি মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের বিশিষ্ট সংবাদমাধ্যম জিও নিউজসহ অন্যান্য মিডিয়া সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) মন্তব্যকে “ভারতের অভ্যন্তর থেকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর” হিসেবে বর্ণনা করেছে। কর্নাটক বিজেপি সভাপতি বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র জিও নিউজের একটি ক্লিপ শেয়ার করে এক্স-এ লিখেছেন, “সীমান্তের ওপার থেকে ওয়াজির-ই-আলা সিদ্দারামাইয়ার জন্য বড় প্রশংসা! পাকিস্তানি মিডিয়া সিদ্দারামাইয়ার প্রশংসায় মুখর এবং তিনি বিজেপি ও অন্যদের কাছ থেকে যে সমালোচনা পাচ্ছেন, তাতে তারা হতাশ।”

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উল্লেখ করে বিজয়েন্দ্র বলেন, “নেহরুকে পাকিস্তানের পক্ষে সিন্ধু জলচুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য রাওয়ালপিন্ডির রাস্তায় খোলা জিপে ঘোরানো হয়েছিল। সিদ্দারামাইয়া কি ভারতের পরবর্তী রাজনীতিবিদ হবেন, যিনি পাকিস্তানে খোলা জিপে ঘুরবেন?”

শূন্যপদ প্রকাশ করেছে UPSC, ভেটেরিনারি অফিসার সহ অনেক পদে হবে নিয়োগ

বিজেপির তীব্র সমালোচনা

কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা বি এস ইয়েদিয়ুরপ্পা সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “যখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত, তখন সিদ্দারামাইয়ার এই মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং শিশুসুলভ। তাঁর বোঝা উচিত ছিল, জাতি যখন একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে, তখন এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। এটি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পদের জন্য মানানসই নয়। আমি এর নিন্দা জানাই। তাঁর দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং তাঁর আচরণ সংশোধন করা উচিত।”

কর্নাটক বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা আর অশোক সিদ্দারামাইয়াকে “পাকিস্তান রত্ন” বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, আপনার শিশুসুলভ এবং অযৌক্তিক মন্তব্যের জন্য আপনি রাতারাতি পাকিস্তানে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে গেছেন।”

কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া

সিদ্দারামাইয়ার মন্তব্য তাঁর দলের সহকর্মীদের মধ্যেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা এইচ আর শ্রীনাথ বলেন, এটি তাঁর “ব্যক্তিগত মন্তব্য” এবং এটি দলের অবস্থানকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি বলেন, “এটি সিদ্দারামাইয়ার ব্যক্তিগত মন্তব্য, কংগ্রেস দলের নয়। আমি শুধু বলতে চাই, যদি আপনি এমন ব্যক্তিগত মন্তব্য করতে চান, তাহলে দল এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে এগিয়ে যান। রাহুল গান্ধী এবং অন্যরা ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের অনুসরণ না করে ব্যক্তিগত মন্তব্য করা একেবারেই ভুল।”

উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার সিদ্দারামাইয়ার মন্তব্যের উপর মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “কংগ্রেস দল সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। আপনাকে তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করতে হবে।”

পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বাইসারান উপত্যকায় সংঘটিত জঙ্গি হামলায় ২৫ জন পর্যটক এবং একজন কাশ্মীরি ঘোড়ার গাড়িচালক নিহত হন। এই নৃশংস হামলা পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তুলেছে। ভারত এর পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করেছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা সুবিধা বন্ধ করেছে। পাকিস্তানও সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারত প্রতিটি সন্ত্রাসী এবং তাদের সমর্থকদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেবে। তিনি বলেন, “কার্গিল থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত শোক আর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই হামলা শুধু নিরীহ পর্যটকদের উপর নয়, দেশের শত্রুরা ভারতের আত্মার উপর আঘাত করার সাহস দেখিয়েছে।” লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বলেছেন, সরকার যে কোনো পদক্ষেপ নিলে বিরোধী দল তাদের পূর্ণ সমর্থন দেবে।