কুকুরের পর বিড়াল, বিহারে নকল সার্টিফিকেটে তোলপাড় প্রশাসন

বিহারে (Bihar) ফের নজিরবিহীন ঘটনা। কখনও ‘ডগ বাবু’, কখনও ‘সোনালিকা ট্র্যাক্টর’, এবার ‘ক্যাট কুমার’। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের রাজ্যে একের পর এক জাল রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট আবেদনের…

কুকুরের পর বিড়াল, বিহারে নকল সার্টিফিকেটে তোলপাড় প্রশাসন

বিহারে (Bihar) ফের নজিরবিহীন ঘটনা। কখনও ‘ডগ বাবু’, কখনও ‘সোনালিকা ট্র্যাক্টর’, এবার ‘ক্যাট কুমার’। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের রাজ্যে একের পর এক জাল রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট আবেদনের ঘটনা প্রশাসনকে চাপে ফেলেছে। সর্বশেষ ঘটনাটি রোহতাস জেলার, যেখানে ‘ক্যাট কুমার’ নামে একজন রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইন আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনে আবেদনকারীর বাবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্যাটি বস’ এবং মায়ের নাম ‘ক্যাটিয়া দেবী’। শুধু তাই নয়, আবেদনপত্রে একটি বেড়ালের ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ওই আবেদনপত্র জমা পড়ার পরই বিষয়টি নজরে আসে রোহতাসের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উদিতা সিং-এর। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আধিকারিক কৌশল প্যাটেলকে নির্দেশ দেন নাসরিগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রাথমিকভাবে মনে করছে, ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে যাতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

   

আবেদনপত্রে উল্লেখিত ঠিকানা হলো—গ্রাম আতিমিগঞ্জ, ওয়ার্ড ০৭, পোস্ট মহাদেব, নাসরিগঞ্জ থানা, পিন ৮২১৩১০। পুলিশ মনে করছে, এ ধরনের জাল আবেদন সাধারণ মানুষের মনে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে এবং সরকারি প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। এজন্য অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে প্রথমে গ্রেফতার এবং পরে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বিহারে এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই পাটনায় ‘ডগ বাবু’ নামে একটি রেসিডেন্সিয়াল প্রুফের জন্য আবেদন জমা পড়েছিল। পূর্ব চম্পারণে জমা পড়েছিল ‘সোনালিকা ট্র্যাক্টর’-এর নামে আবেদন, যেখানে আবার এক ভোজপুরী অভিনেত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। একইসঙ্গে সমস্তিপুর থেকে ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ নামেরও একটি আবেদন জমা পড়েছিল, যেখানে প্রকৃত বাবা-মায়ের নামও দেওয়া ছিল।

এর পাশাপাশি, কিছু আবেদনপত্রে দেখা গেছে কাক, ভগবান রাম-সীতা এবং অন্যান্য কাল্পনিক চরিত্রের নামে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট ইস্যুর দাবি করা হয়েছে। এই সমস্ত ঘটনার পর থেকেই প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে এবং এ ধরনের জাল আবেদন প্রক্রিয়া তদারককারী দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই রেসিডেন্সিয়াল প্রুফের জন্য অস্বাভাবিক হারে আবেদন জমা পড়ছে। কারণ, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গৃহীত ১১টি নথির মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট অন্যতম। ফলে ভোটার তালিকায় নাম সংশোধনের সুবিধা নিতে অনেকেই এই সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করছেন। কিন্তু এই সুযোগের অপব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যক্তি নকল ও অদ্ভুত নামে আবেদন জমা দিচ্ছেন।

‘বিহার রাইট টু পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট’-এর আওতায় রাজ্যের যে কোনও বাসিন্দা অনলাইনে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রতিটি আবেদন জমা পড়ার পর তা যথাযথভাবে যাচাই করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিক দ্বারা জারি করা হয়। কিন্তু জাল আবেদন বৃদ্ধির ফলে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ধীরগতি হচ্ছে এবং সত্যিকারের আবেদনকারীদের ভোগান্তি বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে রোহতাস জেলার ‘ক্যাট কুমার’ ঘটনার পর রাজ্যের ভোটার তালিকা সংশোধন এবং রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট ইস্যু প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসন এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, কারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং এর পিছনে কোনও সংঘবদ্ধ চক্র আছে কিনা। তদন্ত শেষ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।