বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে (Bihar Voters) ভোটার তালিকার বিশেষ তীব্র সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার পর প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অনেক ভোটার বিভ্রান্ত এবং ক্ষুব্ধ, কারণ তাদের নাম কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট তথ্য প্রদান করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে তারা।
নাম পুনরায় তালিকায় যুক্ত করার জন্য বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) কাছে গেলে তাদের কাছে আবাসিক শংসাপত্রের মতো নথি দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু এই শংসাপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে ভোটাররা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং প্রায়শই খালি হাতে ফিরে আসছেন। এই পরিস্থিতি বিহারের ভোটারদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এসআইআর প্রক্রিয়ার অধীনে মৃত ব্যক্তি, ডুপ্লিকেট ভোটার এবং স্থানান্তরিত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত ভোটার, ৭ লক্ষ ডুপ্লিকেট ভোটার এবং ৩৬ লক্ষ স্থানান্তরিত ভোটারের নাম তালিকা থেকে সরানো হয়েছে। তবে, অনেক ভোটারের অভিযোগ, তারা বিহারের স্থায়ী বাসিন্দা এবং পূর্ববর্তী নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, তবুও তাদের নাম বিনা নোটিশে বাদ দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, পাটনার বাসিন্দা শ্যামলাল যাদব বলেন, “আমি গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। এখন আমার নাম তালিকায় নেই। বিএলও আমাকে আবাসিক শংসাপত্র আনতে বলেছে, কিন্তু ব্লক অফিসে গিয়ে কোনও সাহায্য পাইনি।”
ভোটাররা যখন তাদের নাম তালিকায় যুক্ত করতে ফর্ম ৬ বা সংশোধনের জন্য ফর্ম ৭ জমা দিতে বিএলও-দের কাছে যাচ্ছেন, তখন তাদের কাছে আবাসিক শংসাপত্র ছাড়াও জন্ম শংসাপত্র, পাসপোর্ট, শিক্ষাগত শংসাপত্র বা জমির নথির মতো নথি দাবি করা হচ্ছে।
কিন্তু গ্রামাঞ্চলের অনেক ভোটারের কাছে আধার কার্ড ছাড়া এই ধরনের নথি নেই। আবাসিক শংসাপত্রের জন্য ব্লক অফিসে গেলে তাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা অপর্যাপ্ত নথির কারণ দেখিয়ে শংসাপত্র দিতে অস্বীকার করছেন। মুজাফফরপুরের এক বাসিন্দা রামবিলাস পাসওয়ান জানান, “আমি তিনবার ব্লক অফিসে গিয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই নতুন নতুন নথি চাওয়া হচ্ছে।
এটা আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা।”কিশানগঞ্জ, কাটিহার এবং আরারিয়ার মতো সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে পরিস্থিতি আরও জটিল। এই এলাকায় বাংলাভাষী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেস, অভিযোগ করেছে যে এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে করা হয়েছে।
আরজেডি নেতা মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়। বিএলও-রা অনেক গ্রামে ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য যাচাই করেনি, যার ফলে অশিক্ষিত ও দরিদ্র মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”বিএলও-দের উপরও চাপ ক্রমশ বাড়ছে। অনেক বিএলও জানিয়েছেন, তারা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা সংস্থান ছাড়াই এই বিশাল কাজটি সম্পন্ন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জের এক বিএলও বলেন, “আমাদের উপর অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। ভোটাররা বারবার এসে নথি জমা দিচ্ছেন, কিন্তু অনেকের কাছে প্রয়োজনীয় নথি নেই। আমরা সবাইকে সাহায্য করতে পারছি না।” এছাড়া, গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার অভাব এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত প্রচার না থাকায় অনেক ভোটার এসআইআর প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত নন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিহারের প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার এখনও তাদের নাম তালিকায় আছে কিনা তা যাচাই করেনি।এই পরিস্থিতি বিহারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটাররা মনে করছেন, তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ বাড়ছে যাতে এই প্রক্রিয়া আরও সহজ ও স্বচ্ছ করা হয়।
কাঁচি দিয়ে মা-মেয়েকে খুন, অভিযুক্ত জামাই গ্রেফতার
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলে ভোটার সচেতনতা ক্যাম্প এবং নথি সংগ্রহের জন্য বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা উচিত। অন্যথায়, আসন্ন নির্বাচনে অনেক প্রকৃত ভোটার ভোটদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে।