৫৮ বছর বয়সে সরকারি চাকরি পেলেন গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী, কটাক্ষ বিরোধীদের

৫৮ বছর বয়সে সরকারি চাকরি পেলেন বিহারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক চৌধুরী (Bihar Minister Ashok Choudhary)। রাজনীতির পাশাপাশি এবার শিক্ষাক্ষেত্রেও নিজের অবস্থান পাকা করলেন এই বর্ষীয়ান…

Bihar Minister Ashok Choudhary Lands Assistant Professor Job at 58

৫৮ বছর বয়সে সরকারি চাকরি পেলেন বিহারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক চৌধুরী (Bihar Minister Ashok Choudhary)। রাজনীতির পাশাপাশি এবার শিক্ষাক্ষেত্রেও নিজের অবস্থান পাকা করলেন এই বর্ষীয়ান নেতা। বিহার সরকারের গ্রামীণ কর্মবিভাগের মন্ত্রী অশোক চৌধুরী সম্প্রতি সহকারী অধ্যাপক (Assistant Professor) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই খবর সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড়।

অশোক চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ২০২০ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপকের পদে আবেদন করেন এবং দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তাঁর নাম মেধা তালিকায় উঠে আসে। সংরক্ষিত শ্রেণির (অনুষ্ঠিত জাতি) কোটা অনুযায়ী এই পদে তাঁর নির্বাচিত হওয়া হয়েছে।

   

রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি একাডেমিক চর্চা
অশোক চৌধুরী জানান, “রাজনীতিতে আসার আগেই আমার পিতা আমাকে বলেছিলেন, মজবুত রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে হলে শিক্ষাগত দিক থেকেও প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সেই কারণে আমি মাগধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং পরে পিএইচডি করি।” তাঁর পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল স্বাধীন ভারতের দলিত নারী, এবং এই গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম ওই গবেষণাপত্র উপস্থাপনের জন্য। ফলে একাডেমিক চর্চা বরাবরই আমার আগ্রহের বিষয় ছিল। ২০২০ সালে যখন বিজ্ঞপ্তি বেরোয়, তখন আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিই। এখন জেনে খুশি হয়েছি যে নির্বাচিত হয়েছি।”

চাকরি নেবেন তো?
এই প্রশ্নে চৌধুরী পরিষ্কার ভাষায় জানান, “আমি রাজনীতি ছাড়ার প্রশ্নই আসে না। আমি মন্ত্রী পদে থেকেই কাজ করে যাব। তবে চাইলে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবৈতনিক (no salary) সেবা দিতে পারি।” তবে একসাথে দুই পদে কাজ করতে হলে হয় তাঁকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে, নয়তো সরকারের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, “অনেক রাজনীতিবিদই আছেন যারা পাশাপাশি একাডেমিক জীবনও পরিচালনা করেছেন। আমি চেষ্টা করব সেই পথেই হাঁটতে।”

পরিবারে রাজনৈতিক উত্তরসূরি
অশোক চৌধুরীর পরিবারও রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর পিতা মহাবীর চৌধুরী কংগ্রেস আমলে বিহারের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর কন্যা শম্ভবী চৌধুরী বর্তমানে লোক জনশক্তি পার্টির (রাম বিলাস) সাংসদ, নির্বাচিত হয়েছেন সমষ্টিপুর কেন্দ্র থেকে।

Advertisements

কংগ্রেসের কটাক্ষ
এই পুরো বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের তরফে কটাক্ষ করা হয়েছে। টুইটারে (বর্তমান এক্স) কংগ্রেস বিহার ইউনিট একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে লেখে, “যেখানে যুব সমাজ চাকরি পাচ্ছে না, সেখানে অশোক চৌধুরী ৫৮ বছর বয়সে অধ্যাপক! আরএসএস কোটার দয়ায় কি?”

এই মন্তব্যে চৌধুরীর জামাই সায়ন কুণালের বিহার রাজ্য ধর্মীয় ট্রাস্ট বোর্ডে নিয়োগকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে। কুণালের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছিল, এবং তখন চৌধুরী দাবি করেছিলেন, “আমি নয়, কুণাল আরএসএস কোটার মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছে।”

সামাজিক বিতর্ক এবং প্রশ্ন
এই ঘটনায় সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সমাজের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে— যেখানে কোটি কোটি তরুণ সরকারি চাকরির জন্য বছরের পর বছর পরীক্ষা দিচ্ছেন, সেখানে একজন মন্ত্রী কিভাবে সরকারি চাকরি পেয়ে যান, তাও এত দেরিতে? যদিও সংরক্ষিত শ্রেণির কোটা অনুযায়ী নিয়ম মেনে তাঁর নিয়োগ হয়েছে, তবুও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির প্রভাব?
এই নিয়োগের ফলে একদিকে যেমন রাজনীতিতে শিক্ষার গুরুত্বের বার্তা পৌঁছেছে, অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কতটা বিস্তৃত, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দলগুলির দাবি, রাজনীতিকরা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি পদের সুযোগ নিচ্ছেন, যার ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

অশোক চৌধুরীর সহকারী অধ্যাপক পদে নির্বাচিত হওয়া নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা। এটি একদিকে যেমন শিক্ষার গুরুত্ব ও একাডেমিক চর্চার প্রতি শ্রদ্ধা জাগায়, তেমনই রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কও উস্কে দেয়। এখন দেখার বিষয়, তিনি আদৌ ওই পদে যোগ দেন কিনা, না কি শুধুই রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন এই নতুন পরিচয়ের মাধ্যমে।