বিহারে উদ্ধার বিপুল অবৈধ আধার, কেন্দ্রকে নিশানা বিরোধীদের

দোরগোড়ায় বিহার নির্বাচন (Bihar)। এই নির্বাচন ঘিরে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছিলেন নির্বাচন কমিশন কে ম্যানিপুলেট করছে কেন্দ্র। কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়…

Bihar election comission takes big step

দোরগোড়ায় বিহার নির্বাচন (Bihar)। এই নির্বাচন ঘিরে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছিলেন নির্বাচন কমিশন কে ম্যানিপুলেট করছে কেন্দ্র। কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে কমিশনের সমীক্ষার হাতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই সমীক্ষায় নেপাল, বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের মতো দেশ থেকে আসা অনেক ব্যক্তির উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।

এইসব দেশ থেকে আসা ব্যাক্তিরা সপরিবারে বর্তমানে বিহারে বসবাস করছেন। নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানিয়েছে, (Bihar) এই ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ভারতীয় নথি যেমন আধার কার্ড, ডোমিসাইল সার্টিফিকেট এবং রেশন কার্ড বানিয়ে নিয়েছেন। এই তথ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

   

নির্বাচন কমিশনের ব্লক লেভেল অফিসাররা ঘরে ঘরে গিয়ে এই সমীক্ষা করছেন। তাঁদের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের বহু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। (Bihar) এই ঘটনাগুলির বিশদ তদন্ত ১ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্টের মধ্যে করা হবে। যদি অভিযোগগুলি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে এই ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।

বিশেষ নিবিড় সংশোধনের উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট

গত ২৪ জুন থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য হল যোগ্য নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করা এবং অযোগ্য ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া। বিহারে (Bihar)এই ধরনের সংশোধন সর্বশেষ ২০০৩ সালে করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্রুত নগরায়ণ, ঘন ঘন স্থানান্তর, তরুণ নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রাপ্তি, মৃত্যুর তথ্য না জানানো এবং বিদেশি অবৈধ বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি। এই সব কারণে এই সংশোধন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

বিরোধী দলগুলির অভিযোগ

বিরোধী দলগুলি, (Bihar) বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেস, এই প্রক্রিয়ার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের অভিযোগ, এই সংশোধন প্রক্রিয়া নির্বাচনের আগে সম্পন্ন করা সম্ভব নয় এবং এটি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু ভোটারকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র। আরজেডি নেতা মনোজ ঝা এবং কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রকৃত ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিজেপি (Bihar)এই অভিযোগের পালটা জবাব দিয়ে বলেছে, প্রকৃত ভোটারদের যাচাই করা এবং ভুয়ো ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলি কেন বাধা দিচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। বিজেপির সাফাইয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে বিদেশ থেকে এসে বসবাস করা পরিবার গুলি তাদের অবৈধ আধার কার্ড কি করে পেল। আধার কার্ড ইস্যু করার দায়িত্ব কেন্দ্রের। তবে কি এক্ষেত্রে কেন্দ্রের ও সমান দায়।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা

এই ইস্যুটি এখন সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। (Bihar)আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর), অধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস (পিইউসিএল), অ্যাকটিভিস্ট যোগেন্দ্র যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং প্রাক্তন বিধায়ক মুজাহিদ আলম সহ একাধিক পিটিশনকারী এই সংশোধন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

Advertisements

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে (Bihar)এই বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে প্রধানত এই প্রক্রিয়ার সময় এবং গ্রহণযোগ্য নথির বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। তবে, আদালত বলেছে, ভোটারদের পরিচয় পুনরায় যাচাইয়ের জন্য আধার, রেশন কার্ড এবং নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিচয়পত্র বৈধ নথি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। আদালত এই প্রক্রিয়া বন্ধ করেনি, তবে এর সময় নিয়ে গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করেছে।

আদালতের উদ্বেগ (Bihar)

সুপ্রিম কোর্ট (Bihar)জানিয়েছে, এই সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত ভোটারদের বাদ দেওয়া হতে পারে এবং তাঁদের আপিল করার পর্যাপ্ত সময় না থাকায় নির্বাচনের আগে তাঁরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। আদালত বলেছে, “আপনাদের এই প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা নেই… সমস্যা হল এর সময়। আমাদের গুরুতর সন্দেহ রয়েছে যে আপনারা এই কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা। প্রায় আট কোটি মানুষের এই নিবিড় পর্যালোচনা কি আসন্ন নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব?

একজন ব্যক্তি নির্বাচনের আগে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন এবং তাঁর কাছে নিজের বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করার সময় থাকবে না।” আদালত আরও বলেছে, অ-নাগরিকদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য এই প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা নেই, তবে এটি নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত না করে আলাদাভাবে করা উচিত।

পূর্ব সীমান্তে ভারতীয় সেনার ড্রোন হামলায় জঙ্গি ক্যাম্প ধ্বংস

রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনা বিহারের (Bihar)রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিরোধী দলগুলি এই সংশোধনকে তাদের ভোটব্যাঙ্কের উপর আঘাত হিসেবে দেখছে, যেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপি এটিকে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করছে। এই বিতর্ক নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিহারের (Bihar)ভোটার তালিকার এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া একদিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হলেও, এর সময় এবং বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগের মধ্যে এই প্রক্রিয়া কীভাবে এগিয়ে যায়, তা বিহারের আসন্ন নির্বাচনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। নির্বাচন কমিশনের উপর এখন দায়িত্ব রয়েছে এই প্রক্রিয়া নিরপেক্ষভাবে এবং প্রকৃত ভোটারদের অধিকার রক্ষা করে সম্পন্ন করা।