পটনা, ১৩ সেপ্টেম্বর: বিহার নির্বাচন (Bihar Elections) নিয়ে রাজনৈতিক তরজা প্রত্যেক দিনের রোজনামচা। তবে এই নির্বাচনের আবহে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পিছিয়ে নেই হিন্দু ধর্মগুরুরাও। বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিক প্রধান জগদগুরু শঙ্করাচার্য স্বামী অবিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী মহারাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন যে, সনাতন ধর্মের অনুসারীরা এই নির্বাচনে গো-রক্ষা এবং সনাতন ধর্ম রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয়া দল বা প্রার্থীদের পক্ষেই ভোট দেবেন। এই বিবৃতি শুধুমাত্র বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করবে না, বরং সারা দেশের সনাতন সমাজের মধ্যে একটি নতুন চেতনা জাগিয়ে তুলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
শঙ্করাচার্য অবিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী মহারাজ জ্যোতির্মঠের ৪৬তম শঙ্করাচার্য হিসেবে পরিচিত। বক্সারে গো-ধ্বজ স্থাপনা ভারত যাত্রার সময় তিনি এই ঘোষণা করেছেন। এই যাত্রা দেশে গো-হত্যা বন্ধ এবং গো-রক্ষার জন্য একটি জাতীয় আন্দোলনের অংশ। তিনি বলেছেন, “বিহার নির্বাচনে আমরা গো-রক্ষা এবং সনাতন ধর্মের পক্ষে ভোট দেব।
৭৮-৭৯ বছর কেটে গেছে, অনেক আশ্বাস দেয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো দল গো-হত্যার বিরুদ্ধে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়নি। আমরা ২৪৩টি আসন থেকে প্রার্থী লড়াব, কিন্তু এখন তাদের নাম বলব না, না হলে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে।” এই কথাগুলো শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং সনাতন ধর্মের মূল ভিত্তি।গো-মাতাকে রাষ্ট্রমাতা ঘোষণা করা এবং গো-হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবির অংশ।
বিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসে গো-রক্ষা একটি স্পর্শকাতর বিষয়। ১৯৫০-এর দশক থেকে এই ইস্যু নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু শঙ্করাচার্যের এই ঘোষণা নতুনত্ব এনেছে কারণ এই ঘোষণা একজন ধর্মীয় প্রধান করছেন। অনেকেই মনে করছেন শঙ্করাচার্যের এই ঘোষণা সনাতন সমাজের একটি বড় অংশকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিহারে হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ, এবং গো-রক্ষার প্রতি তাদের অনেকের মধ্যে গভীর আনুগত্য রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অনুমান অনুসারে, এই নির্বাচন অক্টোবর-নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে, এবং এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ম্যানিফেস্টোতে গো-সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি যোগ করতে পারে। বিজেপি, জেডিইউ এবং আরজেডি-এর মতো প্রধান দলগুলো শঙ্করাচার্যের এই অভিযোগে এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
শঙ্করাচার্যের এই উদ্যোগ সনাতন ধর্মের রক্ষণাবেক্ষণের একটি বৃহত্তর অংশ। সাম্প্রতিক মহাকুম্ভ মেলায় তিনি অন্যান্য শঙ্করাচার্যদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একটি যৌথ ‘ধর্মাদেশ’ জারি করেছিলেন, যাতে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা এবং গো-মাতাকে ‘রাষ্ট্রমাতা’ ঘোষণার প্রস্তাব ছিল। এই ২৭-দফা নির্দেশিকায় সনাতন সংস্কৃতি, সংস্কৃত ভাষা প্রচার এবং জাতীয় ঐক্যের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে কড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, জানাল কলকাতা পুলিশ
তিনি বলেছেন যে, সনাতনীরা শুধুমাত্র সেই প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেবেন যারা গো-কল্যাণের কাজ করে। এই প্রস্তাবনা ‘ভাই এবং কসাই’ অভিযানের মতো, যেখানে গো-রক্ষার পক্ষে থাকা দলগুলোকে ‘ভাই’ এবং বিপক্ষে থাকা দলগুলোকে ‘কসাই’ বলে চিহ্নিত করা হবে। এই অভিযান লোকসভা নির্বাচনের আগে শুরু হয়েছিল। এই অভিযান এখন বিধানসভা নির্বাচনেও প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।