ভোটের ফল ঘোষণার পরেই হার্ট অ্যাটাক! চরম পরিণতি জনপ্রিয় রাজনীতিবিদদের

bihar-election-candidate-chandrashekhar-singh-heart-attack-after-results

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Election) ফল ঘোষণার দিনই ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। তারাড়ি কেন্দ্রের জন সুরাজ পার্টির প্রার্থী চন্দ্রশেখর সিংহ ভোটের ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। ৬৮ বছরের এই প্রবীণ নেতা ছিলেন এলাকার প্রাক্তন হেডমাস্টার এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এক জনপ্রিয় মানুষ।

Advertisements

ঘটনার খবর মিলতেই তারাড়ি ও আশপাশের গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তার মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

   

ভোটের ফলের দিনই আচমকা অসুস্থতা

১৪ নভেম্বর ২০২৫ সকাল থেকেই ভোটগণনা চলছিল। প্রথম দিকের রাউন্ডেই দেখা যায়, চন্দ্রশেখর সিংহ পিছিয়ে পড়েছেন। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যবধান আরও বাড়তে থাকে।

দুপুরের দিকে ফলাফল মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেলে তাঁর পরিবার জানায়, তিনি অস্বাভাবিকভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ বুকে ব্যথা শুরু হয়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকেরা জানান—তিনি আর নেই। কারণ হিসেবে বলা হয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, অর্থাৎ আচমকা হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া।

প্রশান্ত কিশোরের ‘জন সুরাজ’ আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য মুখ ছিলেন চন্দ্রশেখর

২০২৪ সালে রাজনৈতিক কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোর জন সুরাজ পার্টি গঠন করেন। মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে “বদলে যাও বিহার”—এই স্লোগান নিয়ে রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি করার চেষ্টা করেন তিনি।

চন্দ্রশেখর সিংহ ছিলেন তাঁরই অনুগামী। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের পর তিনি ভাবেন, সমাজে আরও কিছু করার সময় এসেছে। তাই অবসর নিয়েই PK-র ডাকে সাড়া দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। গ্রামের মানুষ তাঁকে ‘‘হেডমাস্টার সাহেব’’ নামেই ডাকত। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর শান্ত স্বভাব তাঁকে তরুণ-বৃদ্ধ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল।

জন সুরাজ এবার ২৪৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু ভোটে একটিও আসন জিততে পারেনি। এক্সিট পোল অনুযায়ী, তারা মোট ভোটের ৮ থেকে ১০ শতাংশ পায়। কিন্তু আসন জেতার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। বিশ্লেষকদের মতে, বিহারের ভোটাররা এ বছরও মূলত NDA ও INDIA জোটের মতো বড় গোষ্ঠীকেই বেশি বিশ্বাস করেছে।

ফলাফল হতাশাজনক হলেও চন্দ্রশেখর সিংহ নাকি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কর্মীদের বলছিলেন—“হার-জিতের ওপর রাজনীতি দাঁড়ায় না, মানুষের সেবাই বড়।”

Advertisements

নির্বাচনী স্ট্রেস কি মৃত্যু বাড়াচ্ছে?

চিকিৎসকেরা বলছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক স্ট্রেস বা মানসিক চাপ অনেক সময় প্রবল শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। পৃথিবীজুড়েই দেখা যায়, ভোটের মতো তীব্র রাজনৈতিক ঘটনার সময় মানুষের রক্তচাপ বেড়ে যায়, হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

২০২৩ সালে The Lancet-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে—
উচ্চ রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলে নির্বাচনকালীন সময়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ১৫% পর্যন্ত বাড়ে।

বিহারের মতো জায়গায় যেখানে রাজনীতি মানুষের জীবনের প্রতিদিনের অংশ, সেখানে প্রার্থীদের ওপর চাপ আরও বেশি। চন্দ্রশেখর সিংহের মৃত্যুকেও অনেক বিশেষজ্ঞ এই প্রেক্ষাপটে দেখছেন।

তারাড়ি কেন্দ্রে শোকের ছায়া

ঘটনার পর তারাড়ির গ্রামগুলোতে নেমে এসেছে গভীর শোক। অনেকেই বলছেন—
“তিনি হারলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। এমন মানুষ আজকাল পাওয়া যায় না।”

জন সুরাজ পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মৃত্যু শুধু তাদের দলের ক্ষতি নয়; বরং বিহারের সাধারণ মানুষের জন্যও বড় ক্ষতি। প্রশান্ত কিশোর নিজেও সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন এবং পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

একটা নির্বাচন কত মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়, আর কতজনের জীবনে চরম পরিণতি ডেকে আনে—চন্দ্রশেখর সিংহের মৃত্যু সেই বাস্তবতাকেই আবার সামনে এনে দিল।

যে মানুষটা জীবনের শেষ বয়সে স্বপ্ন দেখেছিলেন সমাজ পরিবর্তনের, তিনি ভোটের ফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই মৃত্যু নেহাতই একটি পরিসংখ্যান নয়—এটি একটি তীব্র মানবিক হারানোর গল্প।