বিহার: বিধানসভা নির্বাচনে সেলেব্রিটি প্রার্থীদের পারফরম্যান্স নিয়ে ভোটের আগে যেমন উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, ফল ঘোষণার পর সেই জল্পনাই নতুন মোড় নেয়। বলিউড ও আঞ্চলিক সংগীত জগতের তারকারা নির্বাচনী ময়দানে নেমে প্রচার আলোড়িত করলেও শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ভোটবাক্সে সমানভাবে প্রতিফলিত হয়নি। গায়িকা মৈথিলী ঠাকুরই (Maithili Thakur) একমাত্র সেলেব্রিটি যিনি জোরালো জয় দিয়ে নিজের রাজনৈতিক অভিষেককে স্মরণীয় করে তুলেছেন। অন্যদিকে অভিনেতা-গায়ক খেসারি লাল যাদব এবং গায়ক ঋতেশ পাণ্ডে প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দরভঙ্গা জেলার আলিনগর আসনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে ২৫ বছর বয়সেই চমক দেখালেন মৈথিলী ঠাকুর। তিনি মোট ৮৪,৯১৫ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রায় ১১,৭৩০ ভোটে পরাজিত করেন। আলিনগর দীর্ঘদিন ধরে দলবদলের আসন হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু মৈথিলীর জয়ে আসনটি দৃঢ়ভাবে বিজেপির দখলে চলে গেল। তাঁর সংগীতজগতের জনপ্রিয়তা, সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এবং ঘনিষ্ঠভাবে এলাকার সঙ্গে সংযোগ সব মিলিয়ে ভোটারদের মনে আস্থা তৈরি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও স্থানীয় ইস্যুতে তাঁর স্পষ্ট অবস্থান ভোটারদের কাছে তাঁকে আলাদা করে তুলে ধরেছে।
অন্যদিকে বহু আলোচিত ছপরা আসনে বড় ব্যবধানে হেরে গেছেন আরজেডির প্রার্থী ও অভিনেতা-গায়ক খেসারি লাল যাদব (শত্রুঘ্ন যাদব)। তিনি মোট ৭৯,২৪৫ ভোট পেলেও বিজেপির ছোটি কুমারী ৮৬,৮৪৫ ভোট পেয়ে তাঁকে প্রায় ৭,৬০০ ভোটে পরাজিত করেন। ছপরা আসনে বহু বছর ধরে বিজেপির শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, খেসারি লালের জনপ্রিয়তা থাকলেও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব, স্থানীয় সংগঠনের দুর্বল কাঠামো এবং বিরোধীদের কৌশলী প্রচার তাঁকে পিছিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরতে না পারাও তাঁর বিরুদ্ধে গেছে।
জন সুরাজ পার্টির প্রার্থী হিসেবে কারগহার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গায়ক ঋতেশ পাণ্ডে। তবে তিনি মাত্র ১৬,২৯৮ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে শেষ করেন। এখানে জিতেছেন জেডিইউ-র বসিষ্ঠ সিং, যিনি মোট ৯২,৪৮৫ ভোট লাভ করেন। ঋতেশ পাণ্ডের ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে যে নতুন রাজনৈতিক দল বা সীমিত সংগঠনের জোরে সেলেব্রিটি প্রার্থীর জন্য ভোট টানা কঠিন। ভোটাররা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন অভিজ্ঞতা, এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও স্থায়ী রাজনৈতিক উপস্থিতিকে।
সেলেব্রিটি প্রার্থীদের মিশ্র ফলাফলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছবি হলো এনডিএর বিপুল জয়। বিজেপি ৮৯ এবং জেডিইউ ৮৫ আসন পেয়ে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাপিয়ে গেছে। অন্যদিকে আরজেডি পেয়েছে মাত্র ২৫, কংগ্রেস ৬ আসন। এলজেপি (আরভি) পেয়েছে ১৯ আসন, AIMIM ও HAMS পেয়েছে ৫টি করে। বাকি ৯টি আসন গেছে বিভিন্ন ছোট দল ও নির্দলীয়দের দখলে।


