পাটনা: ‘গণতন্ত্রের উৎসবে’ ২০২০ বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Assembly Election) রেকর্ড ভাঙলেন বিহারের মানুষ। বৃহস্পতিবার প্রথম দফার ভোটগ্রহণ পড়বে ভোটার উপস্থিতি (Voter Turnout) ছিল প্রায় ৬০.১৩%, যা আগেরবারের তুলনায় প্রায় ৪.৪৫ শতাংশ বেশি, সামগ্রিকভাবে গত নির্বাচনের তুলনায় ২.৮৪ শতাংশ বেশি। এবারের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় এই বিপুল পরিমাণ ভোটার উপস্থিতি আরও উল্লেখযোগ্য হওয়ার কারণ হল SIR।
দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধন নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক চাপানউতোর দেখেছে বিহার। মূলত দরিদ্র, অনগ্রসর শ্রেণী এবং সংখ্যালঘুদের নিজেদের ভোটার বলে দাবী করে আসা বিরোধীরা সুর চড়িয়েছিল, এসআইআর-এর ফলে মূলত এই ভোটারদের নামই বাদ যাবে। নিবিড় সংশোধনের ফলে যে ৪৭ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের নাম তালিকায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে এদিনের ভোটার উপস্থিতির (Voter Turnout) সংখ্যা বাড়ত।
কিন্তু শুধুমাত্র যদি প্রকৃত ভোটার সংখ্যা একই হয় তবেই। উদাহরণস্বরূপ, ধরে নেওয়া যাক, SIR-এর আগে ১০০ জনের মধ্যে ৬০ জন ভোট দিয়েছেন এবং ভোটদানের হার ৬০ শতাংশ। SIR-এর পরে ধরা যাক, যোগ্য ভোটারের সংখ্যা ৮০-তে নেমে এসেছে। যদি একই ৬০ জন ভোট দেন, তাহলে ভোটদানের হার ৭৫ শতাংশ হবে।
তবে, যদি মাত্র ৪০ জন ভোট দেন, তাহলে সংখ্যাটি ৫০ শতাংশে নেমে আসে। এসআইআর-এর প্রভাব বাদ দিলেও, প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, উচ্চ ভোটদান ক্ষমতা বিরোধী মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়, যার উপর বিরোধীরা ভরসা করছে, প্রতিটি বাড়িতে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা আরও বেশি উৎসাহিত হচ্ছে।
গত তিনটি বিহার নির্বাচনেও (Bihar Assembly Election) তাই হয়েছে। ২০১০-এ নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড ভারতীয় জনতা পার্টির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে প্রভাবশালী জয়লাভ করে। সেবার ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫২.৭৩ শতাংশ এবং জেডিইউ একাই ১১৫টি আসন পেয়েছিল।
২০১৫ সালে লালুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন নীতিশ (Nitish Kumar)। সেবার ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৪.১৮ শতাংশ বেশি এবং কুমার-যাদব জোট জয়লাভ করে। পাঁচ বছর পর ফের বিজেপির জোটে ফিরে যান নীতিশ কুমার এবং তার জোট আবারও জয়লাভ করে। যদিও সেবার জেডিইউ-এর ২৮ টি আসন হ্রাস পায় এবং নীতিশকে ‘জুনিয়র পার্টনার’ মর্যাদায় সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
এবারের ভোটার উপস্থিতি বিরোধী জোটের জন্য কি আশীর্বাদ?
পূর্ববর্তী পরিসংখ্যান যদি ফের প্রমাণিত হয়, তাহলে এই নির্বাচনে কংগ্রেস-আরজেডি বিরোধী জোটের ক্ষেত্রে তা সুসংবাদ হতে পারে। যদিও উচ্চ ভোটার উপস্থিতি সবসময় নির্বাচনকে বিরোধীদের পক্ষে নিয়ে না যেতেও পারে। তার আদর্শ উদাহরণ হল, বিজেপি শাসিত রাজ্য। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ভোটার উপস্থিতি প্রায় সাত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি উভয়বারই জয়লাভ করেছিল।
২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে মধ্যপ্রদেশেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ভোটার উপস্থিতি (Voter Turnout) ৬৭.২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭২.০৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, ভোটার তালিকা সংশোধন (SIR) এবং ৪৭ লক্ষ নাম বাদ দেওয়ার প্রভাব বিবেচনা করা প্রয়োজন। ভোটগ্রহণের আরও একটি ধাপ বাকি আছে রাজ্যের ২৪৩টি আসনের মধ্যে আজ মাত্র ১২১টিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বাকি ১২২ টিতে ১১ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হবে এবং তার তিন দিন পর ১৪ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণা করা হবে।


