বিহার ভোট: সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেরল এনডিএ, বহু দূরে মহাগঠবন্ধন! ট্রেন্ডে স্পষ্ট ব্যবধান

Bihar Assembly Election Results

পাটনা: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা শুরু হতেই শুক্রবার সকাল থেকে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে রাজনৈতিক সমীকরণের নতুন রেখাচিত্র। সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হওয়ার পর পোস্টাল ব্যালটেই ভাগ্যের দরজা খুলে যায় নীতীশ কুমার নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র জন্য। প্রথম এক ঘণ্টাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়—এ বারও ‘সুশাসন’-এর ডাকেই ভরসা রাখছেন বিহারের বড় অংশের ভোটার।

Advertisements

একক বৃহত্তম দল

সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে চিত্র আরও পরিষ্কার। বিজেপি এগোতে থাকে একক বৃহত্তম দলের পথে, পিছু পিছু জেডিইউ। অপরদিকে মহাগঠবন্ধন শুরুর মুহূর্ত থেকেই পিছিয়ে পড়ে। রাজ্যে ক্ষমতার লড়াইতে আরজেডি নিজেদের ঘর সামলালেও, কংগ্রেস আবারও দুর্বল কড়ি হিসেবেই সামনে এসেছে—মাত্র সাতটি আসনে এগোনোর খবর পাওয়া যায় প্রথম দিকে।

   

এমন ছবি যে তৈরি হতে পারে, তা আগেভাগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল একাধিক এক্সিট পোল। তবে মূল প্রশ্ন ছিল—এনডিএ কি নীতীশ কুমারের লক্ষ্য, ‘১৬০ পার’, ছুঁতে পারবে?

শুরুর ট্রেন্ডে এনডিএ-র দাপট, মহাগঠবন্ধন পিছনে Bihar Assembly Election Results

সকালের প্রথম ঘণ্টার ট্রেন্ডেই দেখা যায়, এনডিএ এগোচ্ছে ১৫৮টি আসনে—স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনেক উপরে। বিপরীতে মহাগঠবন্ধন এগোতে থাকে ৭৪টি আসনে। এর মধ্যেই নজর কাড়ে নবাগত দলগুলির সাফল্য—প্রশান্ত কিশোরের জন সুরাজ পার্টি (জেএসপি) তিনটি আসনে এগোয় এবং আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম একটিতে লড়াইয়ের ছবিতে উঠে আসে।

এনডিএ-র ভরসার জায়গাটিও স্পষ্ট—বিজেপি ৮১টি আসনে এগিয়ে এবং জেডিইউ ৬৮টিতে। সঙ্গীদের মধ্যে চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি (আরভি) এবং জিতন রাম মাঞ্জির হাম—প্রতিটি দলই একটি করে আসনে এগোয়।

তেজস্বী এগোচ্ছেন রাঘোপুরে, তেজ প্রতাপও ধরে রাখছেন নিজের জমি

পরিবারের ভিতরদ্বন্দ্বের মাঝেই রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখার লড়াই তেজস্বী ও তেজ প্রতাপের। তেজ প্রতাপ নিজের নতুন গড়া দল জান শক্তি জনতা দলের হয়ে মহুয়া কেন্দ্রে এগোতে শুরু করেন। অন্যদিকে তেজস্বী প্রত্যাশিতভাবেই এগোতে থাকেন রাঘোপুরে—আরজেডির ঐতিহ্যগত আসন।

Advertisements

ইতিহাসগড়ার দোরগোড়ায় নীতীশ কুমার? ভোটের অঙ্কে ‘নারী শক্তি’ বড় ভূমিকা

বিহারের রাজনীতিতে জনমত বদলের ইঙ্গিত এবার এসেছে রেকর্ড ভোটদানে। দুই দফার মিলিত ভোটদান হার ৬৬.৯১ শতাংশ—১৯৫১ সালের পর সর্বোচ্চ। আরও গুরুত্বপূর্ণ, নারী ভোটের অংশগ্রহণ। ভোটার তালিকায় সংখ্যা কম হলেও, মহিলারা পুরুষদের চেয়ে ৪.৩ লক্ষ বেশি ভোট দিয়েছেন। ফেজ ১-এ নারী ভোটদান ৬৯%, এবং ফেজ ২-এ তা পৌঁছে যায় নজিরবিহীন ৭৪%-এ।

নীতীশ কুমারের দুই দশকের শাসনে নারী সমাজের জন্য সাইকেল স্কিম, নগদ সহায়তা, শিক্ষাবৃত্তি—এই সব প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরেই জেডিইউ-র জন্য রাজনৈতিক মূলধন তৈরি করেছে। এই ভোটই শেষ পর্যন্ত এনডিএ-র পাল্লা আরও ভারী করতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত।

এক্সিট পোলের অঙ্কেই মিলছে প্রথম ট্রেন্ডের প্রতিচ্ছবি

অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া এনডিএ-কে দিয়েছিল ১২১–১৪১ আসন, মহাগঠবন্ধনকে ৯৮–১১৮। অন্য একাধিক এক্সিট পোলেও এনডিএ-র অগ্রগতি স্পষ্ট। নয়টি এক্সিট পোলের গড় হিসেব বলছে, এনডিএ ১৪৭-এর বেশি আসনে পৌঁছতে পারে।
প্রশান্ত কিশোরের জেএসপি-র জন্য পূর্বাভাস ছিল ৪ শতাংশ ভোট—যা সিটে রূপান্তরিত নাও হতে পারে, কিন্তু ত্রিমুখী লড়াইয়ে মহাগঠবন্ধনের ভোট কাটতে পারে বলে ধারণা।

কোন কোন হটসিটে নজর?
  • রাঘোপুর: তেজস্বী যাদবের পুনর্নির্বাচন দৌড়
  • মহুয়া: তেজ প্রতাপ যাদবের ত্রিমুখী লড়াই
  • তারাপুর: অর্থমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী
  • লখিসরাই: ডেপুটি সিএম বিজয় সিনহার পরীক্ষা

প্রথম ট্রেন্ডেই স্পষ্ট—বিহারের মসনদে এনডিএ ফের শক্ত অবস্থানে। এখন নজর কেবল একটাই—নীতীশ কুমার কি ফের ইতিহাস লিখতে চলেছেন? পঞ্চমবারের মতো কি তিনি ফিরে আসছেন ‘সুশাসন বাবু’ পরিচয়কে আরও গাঢ় করে?

ভোটগণনা এগোলে সেই উত্তর স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে সকালবেলার অঙ্ক একটাই বলছে—বিহারের রাজনৈতিক মঞ্চে আবারও এনডিএ-রই দাপট।