আক্রান্ত প্রধান শিক্ষক। তাও আবার পুলিশের সামনে। বিহারের (Bihar) আরারিয়া জেলায় এক চাঞ্চল্য। গ্রামবাসীরা, মূলত মায়েরা, তাদের আসনে দাড়িয়ে একই স্কুলের প্রধানশিক্ষক শামসুল হোডা মাসুমকে মারধর করেছেন। এই হামলার পেছনে মূল উৎস হিসেবে চারজন গরিষ্ঠ শ্রেণির (৬ষ্ঠ–৭ম শ্রেণি) মেয়েদের বিরুদ্ধে শামসুল হোডার বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অভিযোগের পটভূমি ও গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া
মেয়েদের দাবি অনুযায়ী, মাসুম শিক্ষক তাদেরকে চকলেট, বিস্কুট, বা স্টেশনারি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে “ইউনিফর্ম চেক” বা “পুরস্কার” দেয়ার অজুহাতে তাদের স্পর্শ করতেন। গ্রামবাসীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের আচরণ চলছে, কিন্তু বিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষা দপ্তর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। স্থানীয় পুলিশ পরে মাসুমকে হেফাজতে নিয়ে যায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় পুলিশের চোখের সামনে ঘুষি, লাথি এবং মারমুখী আক্রমণ চলছে।
অপরদিকে, মাসুম অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেছেন যে, তিনি ছাত্রীদের উৎসাহ দিতে চকলেট, পেন্সিল ইত্যাদি দিতেন, এবং যা বলা হচ্ছে তা একটি ষড়যন্ত্র।
একই সময়, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। শিক্ষক সংঘ এবং শিক্ষা দপ্তর উভয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও জনমত
ভাইরাল ভিডিও এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর প্রতিক্রিয়া এসেছে। অনেকেই গ্রামবাসীদের এই রুখে দাঁড়ানোকে সমর্থন করছেন। জনমত এমনভাবেই গড়ে উঠেছে যে, অনেকেই বলছেন — “এমন ছাত্রদের নিরাপত্তা এবং সম্মান রক্ষা করতে স্কুল প্রশাসন-শিক্ষা দপ্তরের সমর্থন অপর্যাপ্ত ছিল।”
কিছু মন্তব্যে এমন ভাষাও দেখা যায় যা এই ধরনের অপর্যাপ্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও দীর্ঘদিন ধরে চলতে আসা অনিয়মের প্রতি সাধারণ মানুষের গভীর হতাশা বোঝায়। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে আইন ও সামাজিক ন্যায্যতার প্রশ্নকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরে।
অভিযোগ ও আগামী কর্মপন্থা
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ স্বরুপ যৌন নিগ্রহের বিষয়টি অনুসন্ধান করার জন্য প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি বা দল গঠন করতে পারে।
বিদ্যালয় এবং শিক্ষা দপ্তরের শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রক্রিয়ার অভাবে যদি এমন ঘটনা বারবার ঘটে থাকে, তাহলে স্কুল-পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক সংগঠন এবং স্থানীয় সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
সুরক্ষা প্রোটোকল এবং শিশু সুরক্ষার বিধি বিদ্যালয় পর্যায়ে শক্তিশালীভাবে প্রয়োগ করা উচিত, যেন ভবিষ্যতে এমন অভিযোগ দ্রুত ও ন্যায্যভাবে সমাধান করা যায়।
আরারিয়ার এই ঘটনা শুধুমাত্র এক অভিভাবক বা গোষ্ঠীর ক্ষোভই নয় — এটি পুরো সমাজে শিশু সুরক্ষা, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা সম্পর্কে একটি বড় প্রশ্ন তোলে। গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে দেখায় যে, তারা অপেক্ষা করতে পারেনি — তারা তাদের সন্তানের মর্যাদা এবং নিরাপত্তার জন্য সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে আইন, ন্যায্যতা এবং মানবাধিকার রক্ষা করার দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি।


