বিহার, ৬ অক্টোবর: বিহারের রাজনৈতিক আঙিনা বরাবরই জটিল — জাতপাতের সমীকরণ, পয়সার খেলা ও জোট রাজনীতির অঙ্ক মিলে এক অদ্ভুত ধাঁধা তৈরি করেছে। সেই পুরনো জমিতেই এবার নতুন এক চাষ শুরু করেছেন প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor) । একসময় রাজনীতিকদের পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত ‘পিকে’, আজ নিজেই হয়ে উঠেছেন রাজনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্র। তাঁর প্রবেশে বিহারের নির্বাচনী লড়াইয়ে এসেছে এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তা এবং রোমাঞ্চ।
প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক অভিযাত্রা ‘জন সুরাজ’ নামক আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে, রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে— সর্বত্র এখন একটি প্রশ্ন ঘুরছে: “পিকে কি ভোট কাটা হবে, রাজনীতির রাজা হবে, না কি রাজনীতির রাজমিস্ত্রি?”
বিহারের রাজনীতিতে অধিকাংশ নেতা উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতায় আসেন— কেউ পরিবারের সূত্রে, কেউ দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সেখানে পিকে একেবারে ব্যতিক্রম। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় তিনি গড়ে তুলছেন একেবারে শূন্য থেকে। অনেকেই বলছেন, তিনি যেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ছায়াপথ অনুসরণ করছেন— সুশাসনের কথা বলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা তুলে, তরুণদের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে।
তাঁর ভোকাল স্ট্যান্ড, জনসভায় মুখ খোলা সমালোচনা, এবং রাজ্যের শাসকদলগুলির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ তাঁকে মিডিয়ার আলোয় এনেছে। বিশেষ করে শহুরে, শিক্ষিত ও ডিজিটাল প্রজন্মের মধ্যে তাঁর প্রতি কৌতূহল বেড়েছে।
প্রশান্ত কিশোর বারবার বলেছেন— “জন সুরাজ হয় একেবারে প্রথম হবে, নয় একেবারে শেষ। মাঝখানে কিছু নেই।” এই মন্তব্য শুধু আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ নয়, রাজনৈতিকভাবে একটা ঝুঁকির বার্তাও। তার দাবি অনুযায়ী, বিহারে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত দ্বৈত শাসন’ (লালু-নীতিশ শিবির) শেষ হওয়া দরকার, এবং তিনি নিজেই হতে চান সেই পরিবর্তনের মুখ।
এমনকি তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন— যদি নীতিশ কুমারের জেডিইউ ২৫টির বেশি আসন জেতে, তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। এই ঘোষণা যেন তাঁর আত্মবিশ্বাসকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে— একদিকে তা সাহসিকতা, অন্যদিকে অহংকারের চিহ্নও হতে পারে।
পিকে মূলত তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করছেন। তাঁর ভাষণ, ভিডিও, এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিতি তাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তবে গ্রামীণ জনমানসে কতটা প্রভাব ফেলতে পারছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিহারের রাজনীতিতে আজও জাতপাত, স্থানীয় নেতার ব্যক্তিগত প্রভাব, এবং গোষ্ঠীগত আনুগত্য বড় ভূমিকা পালন করে।
যে রাজ্যে লালু প্রসাদ যাদবের মতো জাতপাত-ভিত্তিক রাজনীতির দিকপালরা এখনো প্রাসঙ্গিক, সেখানে ‘পরিবর্তনের ডাক’ কতটা কার্যকর হবে? নীতিশ কুমারের সরকার যদিও জনসমর্থন হারাচ্ছে, তবু তার প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও জোট রাজনীতির চালাকি এখনো টিকে আছে। অন্যদিকে বিজেপিও বিহারে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।