বেঙ্গালুরুতে স্ত্রীর দেহ সুটকেসে ভরে খুন, পুনেতে গ্রেফতার স্বামী

বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) হুলিমাভু এলাকার একটি বাসভবনে এক মহিলার দেহ সুটকেসে ভরা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে, যা শহরজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। মৃতার নাম গৌরী অনিল সম্বেকর, বয়স…

Bengaluru Woman Found Dead in Suitcase, Husband Arrested from Pune

বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) হুলিমাভু এলাকার একটি বাসভবনে এক মহিলার দেহ সুটকেসে ভরা অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে, যা শহরজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। মৃতার নাম গৌরী অনিল সম্বেকর, বয়স ৩২। অভিযোগ, তাকে তার স্বামী রাকেশ সম্বেকর খুন করেছেন। মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা রাকেশকে পুনেতে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

   

রিপোর্ট অনুযায়ী, রাকেশ তার স্ত্রী গৌরীর বাবা-মাকে ফোন করে অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। মহারাষ্ট্র পুলিশের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর হুলিমাভু পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। ফরেনসিক এবং ক্রাইম টিমও ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।

Advertisements

হুলিমাভু পুলিশের একজন সিনিয়র অফিসার সারাহ ফাতিমা জানিয়েছেন, “বিকেল ৫:৩০ নাগাদ আমাদের কন্ট্রোল রুমে একটি ফোন আসে, যেখানে একটি সন্দেহজনক ঝুলন্ত মৃতদেহের কথা জানানো হয়। পুলিশ যখন বাড়িতে পৌঁছায়, তখন দরজা তালাবন্ধ ছিল। প্রবেশের পর বাথরুমে একটি সুটকেস পাওয়া যায়।” ফরেনসিক টিম সুটকেসটি খুলে মহিলার দেহ উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, “দেহটি অক্ষত আছে, টুকরো করা হয়নি, যা সাধারণত সুটকেসে খুনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে দেহে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”

“ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আঘাতের প্রকৃতি ও মাত্রা সম্পর্কে জানা যাবে,” তিনি যোগ করেন। প্রাথমিকভাবে পুলিশ তার স্বামীকে খুঁজে পায়নি। পরে জানা যায়, তাকে আটক করা হয়েছে। “আমরা এখন খুনের মামলা দায়ের করেছি,” তিনি জানান।

পুনেতে স্বামী গ্রেফতার

পুলিশ জানিয়েছে, খুনের পর রাকেশ সম্বেকর পুনে পালিয়ে যান। তবে, তার ফোনের কল রেকর্ড ট্র্যাক করে হুলিমাভু এবং পুনে পুলিশের দ্রুত সমন্বয়ের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। বেঙ্গালুরু থেকে একটি পুলিশ দল এখন পুনেতে গেছে, যাতে অভিযুক্তকে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।

তদন্তে খুনের উদ্দেশ্য খুঁজছে পুলিশ

“আমরা আরও তদন্ত করছি, ঘটনার পিছনে ঠিক কী কারণ ছিল তা বোঝার জন্য,” অফিসার ফাতিমা জানান। তিনি বলেন, দম্পতি দুই বছর আগে বিয়ে করেছিলেন। তারা মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা এবং দুই মাস আগে কাজের জন্য বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন। রাকেশ একটি আইটি কোম্পানিতে প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন, আর গৌরী গৃহিণী ছিলেন এবং চাকরির খোঁজে ছিলেন।

ঘটনার বিবরণ

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে যখন রাকেশ মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেন এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির মালিককে ফোন করে জানান যে তিনি তার স্ত্রীকে খুন করে তার দেহ সুটকেসে ভরেছেন। বাড়ির মালিক তৎক্ষণে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাকেশ মুম্বাইয়ের একটি থানায়ও খুনের কথা জানিয়েছিলেন। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রমাণ সংগ্রহ করেন এবং মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

এই ঘটনা বেঙ্গালুরুতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। গত বছরও শহরে এক মহিলার দেহ টুকরো করে ফ্রিজে রাখার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল, যা শ্রদ্ধা ওয়ালকার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল। তবে এই ক্ষেত্রে দেহ অক্ষত থাকলেও আঘাতের চিহ্নগুলো নৃশংসতার ইঙ্গিত দেয়।

পুলিশের পদক্ষেপ

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে দম্পতি সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে এসে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন। রাকেশ বাড়ি থেকেই কাজ করতেন, যা আইটি পেশাদারদের মধ্যে সাধারণ। গৌরী চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছিলেন। তবে তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনও সমস্যা ছিল কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

পুলিশ রাকেশের ফোন রেকর্ড পরীক্ষা করে তার গতিবিধি ট্র্যাক করেছে। তার ফোন থেকেই গৌরীর বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও, তিনি মুম্বাইয়ের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যা তাকে গ্রেফতার করতে সহায়ক হয়েছে। বেঙ্গালুরু পুলিশ এখন রাকেশকে ফিরিয়ে আনার জন্য পুনে রওনা দিয়েছে। তার জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের উদ্দেশ্য এবং ঘটনার পূর্ণ বিবরণ জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই ঘটনা বেঙ্গালুরুবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। শহরটি ভারতের আইটি রাজধানী হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই চিন্তিত। স্থানীয়রা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নই নয়, সমাজে সম্পর্কের জটিলতা এবং মানসিক চাপেরও প্রতিফলন।

একজন প্রতিবেশী জানান, “তারা নতুন এসেছিলেন। খুব বেশি কথা বলতেন না। এমন ঘটনা এখানে ঘটবে ভাবিনি।” আরেকজন বলেন, “এত বড় শহরে মানুষ একা থাকে, কিন্তু এভাবে খুনের ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন।”

পুলিশের আশ্বাস

সারাহ ফাতিমা জানিয়েছেন, “আমরা পুরো বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছি। অভিযুক্তকে শীঘ্রই বেঙ্গালুরুতে আনা হবে। আমরা নিশ্চিত করব যে এই মামলায় ন্যায়বিচার হয়।” পুলিশ এখন গৌরীর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে, যাতে তাদের বক্তব্যও তদন্তে যুক্ত করা যায়।

এই নৃশংস ঘটনা বেঙ্গালুরুর নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। একটি তরুণ দম্পতির জীবনে এমন মর্মান্তিক পরিণতি কীভাবে এল, তা জানতে তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। রাকেশের জিজ্ঞাসাবাদের পর এই খুনের পিছনের গল্প সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ্যে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ততক্ষণ পর্যন্ত, এই ঘটনা শহরের বাসিন্দাদের মনে ভয় আর বিস্ময়ের ছাপ রেখে গেছে।