ভারতের শহরগুলোর মধ্যে নারীদের জন্য কাজ করা ও বসবাসের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শহর (Women Safety Rankings) হিসেবে বেঙ্গালুরু এবার শীর্ষে উঠেছে। একটি সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, কর্ণাটকের এই আইটি হাবটি নারী নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রে সুযোগের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম স্থান হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। জরিপের ফলাফলে বেঙ্গালুরুকে প্রথম স্থানে রাখা হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে চেন্নাই, মুম্বই, হায়দ্রাবাদ এবং পুনে। এই তালিকায় কলকাতা সপ্তম স্থানে অবস্থান করছে, যা বহু বছর ধরে নারী নিরাপত্তার জন্য পরিচিত ছিল।
বেঙ্গালুরুর উত্থান: কেন এটি শীর্ষে?
বেঙ্গালুরুকে নারীদের জন্য সবচেয়ে আদর্শ শহর হিসেবে চিহ্নিত করার পেছনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং জীবনযাপনের মানের উন্নতি। শহরটি আইটি ও প্রযুক্তি খাতে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে, যা নারীদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সঙ্গে সঙ্গে শহরে পুলিশের উপস্থিতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার (যেমন সিসি টিভি নজরদারি এবং নারী নিরাপত্তা অ্যাপ) নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেছে। জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে যে বেঙ্গালুরুর সামাজিক প্রকৌশল ও কমিউনিটি সংযোগও নারী নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কলকাতার অবস্থান: উন্নতি নাকি পিছিয়ে পড়া?
কলকাতা, যাকে কখনো “জয়ের নগরী” হিসেবে অভিহিত করা হতো, এবার সপ্তম স্থানে রয়েছে। বহু বছর ধরে কলকাতা নারী নিরাপত্তার জন্য গৌরবান্বিত ছিল, বিশেষ করে এর দ্রুত ক্রিয়াশীল পুলিশ বাহিনী এবং সচেতন সম্প্রদায়ের কারণে। তবে, সাম্প্রতিক জরিপে কলকাতার অবস্থান কিছুটা হতাশাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বটে, কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগে অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতা এখনো পিছিয়ে রয়েছে।
কলকাতার পক্ষে যেমন এটি একটি সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ শহর, তেমনি এখানে শিক্ষা ও মিডিয়া খাতে নারীদের জন্য কিছু সুযোগ রয়েছে। তবে, আইটি ও শিল্প খাতে বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো শহরগুলোর তুলনায় কলকাতা এখনো পিছিয়ে। এই জরিপে কলকাতার পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা এবং সম্প্রদায়ের সচেতনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, তবে শহরের অবকাঠামো এবং নতুন প্রযুক্তির অভাব এটিকে তালিকায় নিম্নে নামিয়ে দিয়েছে।
অন্যান্য শহরের অবস্থান
জরিপে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চেন্নাই, যেখানে আইটি, স্বাস্থ্যসেবা এবং অটোমোবাইল খাতে নারীদের জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে। তৃতীয় স্থানে মুম্বই, যা এর বৈচিত্র্যময় কর্মক্ষেত্র এবং শিল্প জগতের জন্য পরিচিত। হায়দ্রাবাদ (চতুর্থ) এবং পুনে (পঞ্চম) উভয়ই নারী নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে উঠে এসেছে। আহমেদাবাদ (ষষ্ঠ) এবং দিল্লি (অষ্টম) নিরাপত্তা ও সুযোগের ক্ষেত্রে মাঝারি অবস্থানে রয়েছে।
নারী নিরাপত্তার মাপকাঠি
জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে কয়েকটি মূল মাপকাঠির ওপর। এর মধ্যে রয়েছে অপরাধের হার, বিচারের হার, পুলিশের উপস্থিতি, সম্প্রদায়ের সক্রিয়তা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার। বেঙ্গালুরুর সাফল্যের পেছনে এই সব ক্ষেত্রে তার উন্নতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে, কলকাতার মতো শহরগুলোর জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে যে, তাদের প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর উন্নতি করতে হবে।
ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কলকাতা এখনো তার সম্ভাবনা বজায় রাখে। শহরের সচেতন সম্প্রদায় এবং পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা যদি প্রযুক্তির সঙ্গে মিশ্রিত হয়, তবে কলকাতা আবার তালিকায় উর্ধ্বে উঠতে পারে। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরু নারী নিরাপত্তা এবং কর্মক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা অন্যান্য শহরের জন্য অনুকরণীয়।
এই জরিপের ফলাফল নারী নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভারতের শহরগুলোর উন্নতির দিকে একটি ইঙ্গিত দেয়। এটি শুধুমাত্র সরকারের জন্য নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের জন্য একটি দায়িত্ব হয়ে উঠেছে যে, নারীদের নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ জীবন দেওয়ার জন্য কাজ করা প্রয়োজন।