বেঙ্গালুরু: গে ডেটিং অ্যাপের (Gay Dating App) মাধ্যমে বন্ধুত্বের আশায় এক যুবক যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, তা এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। ৩১ বছর বয়সী এক বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে শুধুমাত্র লুঠের শিকারই হননি, বরং তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ ও প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটে উত্তর বেঙ্গালুরুর গোবিন্দপুরা এলাকায়।
The Economic Times-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভুক্তভোগী ব্যক্তি সম্প্রতি এলজিবিটিকিউ প্ল্যাটফর্ম ঘেঁটে একটি জনপ্রিয় গে ডেটিং অ্যাপ ডাউনলোড করেন। মাত্র ১ টাকার একটি তিন দিনের পাস কিনে তিনি সেখানে অ্যাক্সেস নেন। সেখানেই এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয়, যিনি নিজেকে “সুফি” বলে পরিচয় দেন। ভিডিও কলের মাধ্যমে দু’জনের মধ্যে কথোপকথন হয় এবং সুফি ভুক্তভোগীর ফোন নম্বরও চান, যাতে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফোনে আরও যোগাযোগ রাখা যায়।
উল্লেখ্য, ৫ জুলাই সন্ধ্যায় বেঙ্গালুরুর ভ্যালিকাভাল লেআউটের একটি পেইং গেস্টের পাশের শেডে দেখা করতে যান ভুক্তভোগী (ধরা যাক নাম সাহিল)। সেখানে পৌঁছাতেই এক ব্যক্তি এসে দাবি করেন, ওই শেডের মালিক তিনি এবং সেখানে বেআইনি কিছু হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। এরপর তিনি সাহিলের ফোন কেড়ে নেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আরও একজন এসে সাহিলকে মারধর শুরু করে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুফি তখনই নিজের আসল পরিচয় ফাঁস করেন এবং বলেন, “এই সব কিছুই প্ল্যান করা।”
প্রথমে সাহিলের কাছ থেকে ১,০০০ ট্রান্সফার করিয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাঁকে জোর করে ফোন করে বন্ধুদের থেকে আরও ২,২৬০ আদায় করতে বাধ্য করা হয়। পুরো ঘটনায় প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। সাহিল যখন পালাতে চেষ্টা করেন, তখন সুফিই তাঁকে ধরে ফেলে। ঘণ্টাখানেক পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, মানসিকভাবে তিনি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েন।
সাহিল শুরুতে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে দ্বিধাবোধ করেন। এলজিবিটিকিউ পরিচয় ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে পিছিয়ে দেয়। কিন্তু পরে সাহস করে তিনি ৯ জুলাই পুলিশে অভিযোগ জানান। এরপর বেঙ্গালুরু পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং দু’জন অভিযুক্ত—২৬ বছর বয়সী সুফিয়ান ও ২৪ বছর বয়সী মাটিনকে গ্রেফতার করে।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে ডেটিং অ্যাপগুলিকে আরও নিরাপদ করা যায়? এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জন্য এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম যেমন একমাত্র সামাজিক মেলবন্ধনের পথ, তেমনই দুর্বৃত্তদের কাছে এটিই হয়ে উঠছে শিকার বাছাইয়ের মাধ্যম। পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এই ধরনের ঘটনায় কাউকে ভয় না পেয়ে অবিলম্বে অভিযোগ জানানো উচিত, এবং প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে।