কর্ণাটক হাইকোর্ট বেঙ্গালুরুর (bengaluru) এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)-এর আইপিএল বিজয় উৎসবের সময় সংঘটিত ভয়াবহ ভিড়ের ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে। এই ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫৬ জন আহত হয়। আদালত এই মামলায় গ্রেপ্তারের সঙ্গে সম্পর্কিত আবেদনগুলির শুনানির সময় সরকারের কাছে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, অনুমতি এবং জরুরি প্রস্তুতি সংক্রান্ত নয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে।
আদালত প্রক্রিয়াগত ত্রুটি এবং জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ৪ জুন সন্ধ্যায় এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের (bengaluru) সামনে এই ভিড়ের ঘটনা ঘটে, যখন প্রায় ২.৫ লক্ষ মানুষ RCB-এর আইপিএল বিজয় উদযাপন উৎসবে অংশ নিতে জড়ো হয়েছিল। স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৫,০০০ হলেও এই বিশাল জনসমাগমের ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এই ঘটনায় সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হাইকোর্ট এই ঘটনাকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (সুও মোটু) একটি রিট পিটিশন হিসেবে গ্রহণ করে এবং রাজ্য সরকারের কাছে বিস্তারিত জবাব তলব করেছে(bengaluru)। অ্যাডভোকেট জেনারেল শশি কিরণ শেট্টি, যিনি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন, আদালতকে জানান যে তদন্ত ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে (CID) হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবে, বেঙ্গালুরু (bengaluru) সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ (CCB) এখনও গ্রেপ্তার করছে এবং কাব্বন পার্ক পুলিশ অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করছে। এই প্রক্রিয়াগত অসঙ্গতি নিয়ে আদালত তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। অ্যাডভোকেট জেনারেল স্বীকার করেন যে তদন্ত হস্তান্তরের বিষয়ে আদালতকে জানানোর ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে। এই অসঙ্গতির কারণে অভিযুক্তরা তাদের গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং জামিনের আবেদন করছে।
হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে নিম্নলিখিত নয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে:
কবে এবং কে এই বিজয় উৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং কীভাবে এটি পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল?
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?
জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল?
উৎসবস্থলে কী ধরনের চিকিৎসা এবং অন্যান্য সুবিধা মজুত ছিল?
উৎসবে কতজন মানুষ উপস্থিত থাকতে পারে, তার পূর্বাভাস কি কোনো মূল্যায়ন করা হয়েছিল?
আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল কি? যদি না হয়, তবে কেন?
আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কত সময় লেগেছিল?
৮. ৫০,০০০ বা তার বেশি জনসমাগম পরিচালনার জন্য কোনো স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP) তৈরি করা হয়েছে কি?
এই ইভেন্ট আয়োজনের জন্য কোনো অনুমতি চাওয়া হয়েছিল কি?
রাজ্য সরকার (bengaluru) এই প্রশ্নগুলির জবাব দিতে সময় চেয়েছে এবং বলেছে যে তারা একটি সিলড কভারে তাদের উত্তর জমা দেবে। অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছেন, তদন্ত এবং গ্রেপ্তারের মধ্যে এই অসঙ্গতির কারণে অভিযুক্তরা তাদের গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে আইনি ত্রুটির অভিযোগ তুলছে। তিনি আরও বলেন, “ন্যায়ের স্বার্থে” উন্মুক্ত আদালতে আরও বিশদ প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এই ঘটনায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB), ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি DNA এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড এবং কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (KSCA)-এর বিরুদ্ধে কাব্বন পার্ক থানায় ফৌজদারি অবহেলার অভিযোগে একটি FIR দায়ের করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া (bengaluru) ঘোষণা করেছেন যে মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এছাড়াও, তিনি ঘটনার তদন্তের জন্য একটি ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, তিনি স্বীকার করেছেন যে সরকার এত বড় জনসমাগমের জন্য প্রস্তুত ছিল না।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিতর্কও তীব্র হয়েছে। বিরোধী দল বিজেপি এবং জেডি(এস) সরকারের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের অধৈর্য, অপরিপক্কতা এবং দায়িত্বহীনতাকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। বিজেপি নেতা বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র অভিযোগ করেছেন যে সরকার জনরোষের চাপে পড়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করেছে(bengaluru)।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া (bengaluru)এই অভিযোগের জবাবে বলেছেন, “যারা দৃশ্যত দায়ী এবং কর্তব্যে অবহেলার জন্য দোষী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা রাজনীতি করছি না, তবে বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।” আদালত জানতে চেয়েছে, এই উৎসবের জন্য কে অনুমতি দিয়েছিল এবং কেন এত বড় জনসমাগমের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অ্যাডভোকেট জি আর মোহন, যিনি একটি পিআইএল-এর প্রতিনিধিত্ব করছেন, জানিয়েছেন যে RCB-এর একজন প্রতিনিধি বিনামূল্যে প্রবেশের ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু স্টেডিয়ামে মাত্র তিনটি প্রবেশদ্বার খোলা ছিল, যা ভিড়ের চাপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এছাড়াও, মাত্র দুটি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়েছিল, যা এত বড় ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত ছিল।
এই ঘটনায় কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (KSCA) শীর্ষ কর্মকর্তারা নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। KSCA-এর সেক্রেটারি এ শঙ্কর এবং ট্রেজারার ই এস জয়রাম তাদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে, তারা দাবি করেছে যে ভিড় নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের নয়, বরং এটি RCB, ইভেন্ট আয়োজক এবং পুলিশের দায়িত্ব ছিল।
KSCA-এর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যেখানে তারা FIR বাতিলের দাবি জানিয়েছে। আদালত KSCA কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার থেকে অন্তর্বর্তী সুরক্ষা প্রদান করেছে, তবে তাদের তদন্তে সহযোগিতা করতে বলেছে।
রাজ্য সরকার (bengaluru) এই ঘটনার তদন্তের জন্য অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারপতি জন মাইকেল ডি’কুনহার নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের কমিশন গঠন করেছে। সরকার জানিয়েছে, এই কমিশন এক মাসের মধ্যে তার রিপোর্ট জমা দেবে। এছাড়াও, বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ কমিশনার বি দয়ানন্দ সহ পাঁচজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
হংকং ম্যাচে জিতলে সুনীল-সন্দেশদের জন্য ৫০,০০০ ডলারের বোনাস!
এই ঘটনা বেঙ্গালুরুর (bengaluru) শাসনব্যবস্থা এবং জননিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটি প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঘটনাকে “হৃদয়বিদারক” বলে অভিহিত করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যারিকেড বা পুলিশ মোতায়েন ছিল না। এই ঘটনা ভবিষ্যতে বড় ইভেন্টে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি প্রস্তুতির জন্য নতুন নির্দেশিকা তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।