HomeBharatপ্রযুক্তি শহরে ভেজাল ঘি কাণ্ডে পুলিশের জালে শিবকুমার

প্রযুক্তি শহরে ভেজাল ঘি কাণ্ডে পুলিশের জালে শিবকুমার

- Advertisement -

বেঙ্গালুরু: দক্ষিণ ভারতের অন্যতম বিশ্বস্ত দুগ্ধ ব্র্যান্ড ‘নন্দিনী’-র নামে ভেজাল ঘি তৈরির ভয়াবহ চক্র ভেঙে ফেলার পর আবারও নতুন তথ্য সামনে এল। বুধবার গ্রেফতার হলেন এই নন্দিনী ভেজাল ঘি কাণ্ডের মূল পান্ডা দম্পতি শিবকুমার ও রাম্যা। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ নকল ঘি উৎপাদন করছিলেন বলে জানিয়েছে বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ (CCB)।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শহরের অভ্যন্তরে গোপনে পরিচালিত এক কারখানায় বসেই চলতো এই ভেজাল ঘি তৈরির কাজ। সকালে হানা দিয়ে CCB-এর বিশেষ তদন্তকারী দল কারখানা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিশাল ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিন, শিল্পোৎপাদনের মতো উন্নত সরঞ্জাম, ঢাকনা লাগানো ক্যান, লেবেল, সিল, প্যাকেজিং স্টিকার সবই উদ্ধার করে। এই সরঞ্জাম দেখে তদন্তকারীরাও বিস্মিত। তাঁদের কথায়, “এত সুসংগঠিত মেশিনারি ব্যবহার করে ভেজাল ঘি উৎপাদন আমরা এর আগে দেখিনি।”

   

বিজেপি কংগ্রেসের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্যেও সাধারণ মানুষের আস্থা পাওয়া KMF-এর নন্দিনী ব্র্যান্ড দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ ভারতের দুধ ও দুগ্ধপণ্য বাজারে আস্থার প্রতীক। সেই ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তাকেই হাতিয়ার করেছিল শিবকুমার–রাম্যা দম্পতি। কম দামে পাম অয়েল, নারকেল তেল ও বিভিন্ন নিম্নমানের উপাদান মিশিয়ে নন্দিনীর লোগো ও প্যাকেজিং নকল করে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছিল ভেজাল ঘি।

এই প্রতারণা চক্র টের পাওয়া যায় নন্দিনীর বাজারে সরবরাহের অস্বাভাবিক প্যাটার্ন দেখা যাওয়ার পর। সন্দেহ বাড়তেই KMF Vigilance Wing এবং CCB Special Investigation Squad নামে একটি বিশেষ যৌথ দল গঠন করা হয়। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৪ নভেম্বর থেকে তদন্ত শুরু হয়।

এরপর টানা কয়েকদিন ধরে চালানো হয় অভিযান। প্রথমে ধরা পড়ে চার সহযোগী। পরে চামরাজপেটের নাঞ্জাম্বা আগ্রহারা এলাকার ‘Krishna Enterprises’-এর গুদাম, দোকান ও একাধিক গাড়িতে হানা দিয়ে মেলে আরও বড় তথ্য। এখান থেকেই দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন খুচরো বাজারে ছড়ানো হত নকল নন্দিনী ঘি। এমনকি তামিলনাডুর দিক থেকে ভেজাল ঘিতে পরিপূর্ণ পিকআপ ভ্যান ঢুকছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। আটক করা হয় এমনই একটি গাড়ি, যাতে ছিল প্রচুর পরিমাণ প্যাকেটজাত ভেজাল ঘি।

পুলিশ মোট ৮,১৩৬ লিটার ভেজাল ঘি উদ্ধার করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৬.৯৫ লক্ষ টাকা। সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে ল্যাব-মতো যন্ত্রপাতি, শিল্পোৎপাদনে ব্যবহৃত বড় মিক্সার, প্যাকেজিং মেশিন, সিলিং মেশিন, ঘি তৈরির কন্টেনার, পাঁচটি মোবাইল ফোন, ১.১৯ লক্ষ টাকা নগদ, এবং চারটি বলেরো গুডস ভেহিকল, যার মূল্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১.২৬ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

তদন্তের আরও একটি গুরুতর দিক সামনে আসছে ভেজাল ঘিতে প্রাণীর চর্বি (animal fat) মেশানো হয়েছিল কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। কর্মকর্তাদের বক্তব্য, “এ ধরনের ভেজাল শুধু প্রতারণা নয়, বরং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক।” CCB জানিয়েছে, বাজারে এই নকল ঘির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় নন্দিনী ব্র্যান্ডের আসল ঘির বিক্রি পর্যন্ত প্রভাবিত হচ্ছিল। এ ধরনের ভেজাল দুগ্ধপণ্য শিশু থেকে প্রবীণ সবাইয়ের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে।

অভিযানে ধরা পড়া দম্পতির বিরুদ্ধে IPC-এর বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুর প্রায় পুরো শহরজুড়ে এখন এই ঘটনা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে যারা কোটি টাকার ব্যবসা করছিল, তাদের গ্রেফতারে স্বস্তি ফিরেছে বলে মনে করছেন KMF-এর কর্মকর্তারা।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular