অসমের কার্বি অংলং জেলার বারলংফের অঞ্চল থেকে অপহৃত হওয়া বাঙালি ব্যবসায়ী (Bengali businessman) রতন দত্তের মর্মান্তিক পরিণতি প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধনসিরি অভয়ারণ্য থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি এলাকার মানুষকে চমকে দিয়েছে এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
গত ১৯ ডিসেম্বর কার্বি অংলং জেলার বারলংফের অঞ্চল থেকে রতন দত্তকে অপহরণ করা হয়। তিনি স্থানীয়ভাবে পরিচিত একজন ব্যবসায়ী ছিলেন এবং এলাকার মানুষ তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করতেন। অপহরণের পরপরই তাঁর মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবি করে।
রতন দত্তের পরিবারের সদস্যরা অবিলম্বে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। কার্বি অংলং জেলার এসপি সঞ্জীবকুমার শাইকিয়া জানান, মুক্তিপণ দাবির সূত্র ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু রতনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মৃতদেহ উদ্ধার
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ধনসিরি অভয়ারণ্যের গভীরে পুলিশ রতন দত্তের মৃতদেহ খুঁজে পায়। পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণকারীরা তাঁকে হত্যার পরে দেহটি জঙ্গলে ফেলে রেখে গিয়েছিল। দেহে আঘাতের চিহ্ন এবং ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশের ভূমিকা এবং তদন্ত
এসপি সঞ্জীবকুমার শাইকিয়া জানান, অপহরণ এবং হত্যার পেছনে জড়িত অপরাধীদের ধরতে তদন্ত চলছে। কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকার করেছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে যে, এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্য এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
রতন দত্তের এই মর্মান্তিক পরিণতিতে তাঁর পরিবার গভীর শোকাহত। পরিবারের সদস্যরা এই নির্মম হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং এলাকাবাসীরাও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা এখানে নিজেদের নিরাপদ মনে করতাম। কিন্তু এই ঘটনার পর আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।”
অপহরণ এবং মুক্তিপণ সংক্রান্ত ঘটনা বৃদ্ধির শঙ্কা
অসমের কিছু অঞ্চলে অপহরণ এবং মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনা ইদানীং বেড়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের টার্গেট করা হচ্ছে। এই প্রবণতা রোধ করতে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের ওপর চাপ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এলাকায় আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। স্থানীয় পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন।
রতন দত্তের অপহরণ এবং হত্যার ঘটনা শুধু তাঁর পরিবারের জন্য নয়, পুরো কার্বি অংলং জেলার মানুষের জন্য গভীর ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হলে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। প্রশাসনের উচিত এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এলাকাবাসীর আস্থা পুনরুদ্ধার করা।