প্রতিরক্ষা জোরদার করতে এবার ভারতের পাশে বেলারুশ

চীনের কিংডাও শহরে অনুষ্ঠিত শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বেলারুশ (Belarus) প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভি.জি. খ্রেনিনের…

Belarus joins India

চীনের কিংডাও শহরে অনুষ্ঠিত শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বেলারুশ (Belarus) প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভি.জি. খ্রেনিনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। এই বৈঠক ভারত ও বেলারুশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতাকে আরও জোরদার করার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে ।

এসসিও-র মতো একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই বৈঠক উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ প্রদান করেছে।

   

বৈঠকের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য (Belarus) 

শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) হলো একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক সংগঠন, যা এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই বছর চীনের কিংডাওতে অনুষ্ঠিত এসসিও (Belarus) প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এই সম্মেলনের প্রান্তে রাজনাথ সিং ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল খ্রেনিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ভারতের কৌশলগত কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভারত ও বেলারুশ(Belarus) দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই একটি শক্ত ভিত্তি রয়েছে। বেলারুশ ভারতের সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করে আসছে। এই বৈঠকে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

আলোচনার মূল বিষয়

বৈঠকের সময় রাজনাথ সিং ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল খ্রেনিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক প্রযুক্তি বিনিময়, যৌথ সামরিক মহড়া, এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উৎপাদন ও সরবরাহ। ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের আওতায় বেলারুশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও, উভয় দেশ সন্ত্রাসবাদ ও সাইবার নিরাপত্তার মতো অ-প্রথাগত হুমকির বিরুদ্ধে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে।

রাজনাথ সিং (Belarus)  এই বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত তার প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করতে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রেক্ষাপটে বেলারুশের সঙ্গে প্রযুক্তি স্থানান্তর ও যৌথ গবেষণার বিষয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খ্রেনিনও এই বৈঠকে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার প্রতি তাঁর দেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ভারত-বেলারুশ সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভারত ও বেলারুশের (Belarus)  মধ্যে সম্পর্কের শিকড় সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। সোভিয়েত আমলে ভারতের সামরিক বাহিনী বেলারুশের তৈরি সরঞ্জামের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। বেলারুশ স্বাধীনতা লাভের পরেও এই সম্পর্ক অটুট রয়েছে। বর্তমানে, বেলারুশ ভারতের সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Advertisements

উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণে বেলারুশের প্রযুক্তিগত সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, দুই দেশের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে। এই বৈঠকে উভয় নেতা এই ধরনের যৌথ উদ্যোগের পরিধি আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

এসসিও-র ভূমিকা ও ভারতের অবস্থান

এসসিও-র মাধ্যমে ভারত তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সংগঠনের সদস্য হিসেবে ভারত সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। রাজনাথ সিং এই সম্মেলনে ভারতের এই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন যে ভারত শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এসসিও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বেলারুশের (Belarus) সঙ্গে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এসসিও-র মাধ্যমে ভারতের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পরিধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ভারতের বহুমুখী কূটনীতির একটি উদাহরণ, যেখানে ভারত একদিকে এসসিও-র মতো আঞ্চলিক সংগঠনের মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদার করছে এবং অন্যদিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করছে।

স্বামীর সম্মতি ছাড়াই বৈধ নারীর ‘খুলা’: ঐতিহাসিক রায় হাই কোর্টের

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই বৈঠকের মাধ্যমে ভারত ও বেলারুশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতার লক্ষ্য অর্জনে বেলারুশের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়াও, উভয় দেশের মধ্যে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

রাজনাথ সিং এই বৈঠকে বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আগামী দিনে এই দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যায়।

কিংডাওতে এসসিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে রাজনাথ সিং ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল খ্রেনিনের মধ্যে এই আলোচনা ভারত-বেলারুশ (Belarus) সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই বৈঠক শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং বেলারুশের প্রযুক্তিগত দক্ষতার সমন্বয়ে উভয় দেশই পারস্পরিক সুবিধা অর্জন করতে পারবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News