সম্প্রদায়িক উত্তেজনার আশঙ্কায় ইন্টারনেট বন্ধ, নিরাপত্তায় ৮,০০০ পুলিশ মোতায়েন

উত্তরপ্রদেশের বেরেলি জেলায় সম্প্রদায়িক অশান্তি প্রতিরোধে রাজ্য প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু করে টানা ৪৮ ঘণ্টার জন্য জেলা জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা…

উত্তরপ্রদেশের বেরেলি জেলায় সম্প্রদায়িক অশান্তি প্রতিরোধে রাজ্য প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুরু করে টানা ৪৮ ঘণ্টার জন্য জেলা জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২ অক্টোবর বিকেল ৩টা থেকে ৪ অক্টোবর বিকেল ৩টা পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড এবং এসএমএস পরিষেবা বন্ধ থাকবে।

Advertisements

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে গুজব ছড়ানো ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রোধ করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র সচিব গৌরব দয়াল জানান, “শান্তি ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।”

   

এই সিদ্ধান্ত এসেছে এক সপ্তাহের মধ্যেই, যখন ২৬ সেপ্টেম্বর ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টারকে কেন্দ্র করে কোটওয়ালি এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারের নামাজের পর প্রায় ২,০০০ মানুষ একটি মসজিদের বাইরে জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করে। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পাথর ছোড়াছুঁড়ির ঘটনা ঘটে, যা এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

আগামী শুক্রবারের নামাজকে ঘিরে নতুন করে কোনও উত্তেজনা যাতে না ছড়ায়, সেই লক্ষ্যে প্রশাসন আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামাতের সভাপতি মৌলানা শহাবুদ্দিন রজভি বেরেলভি শান্তির আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নামাজ শেষে সরাসরি বাড়ি ফিরে যান। কেউ যদি প্রতিবাদের ডাক দেয়, সেখানে যোগ দেবেন না। কেউ আপনাকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেই ফাঁদে পা দেবেন না।”

তিনি আরও অনুরোধ করেছেন, ইমামরা যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে দূরে থেকে শুধুমাত্র শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাদেশিক সশস্ত্র কনস্ট্যাবুলারি (PAC) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF)-এর বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে পুরো জেলাজুড়ে। সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে ড্রোনের মাধ্যমে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।

প্রশাসনের তথ্যমতে, প্রায় ৮,০০০ পুলিশ কর্মী (UP police) এবং আধিকারিক বর্তমানে বেরেলিতে মোতায়েন রয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৬,০০০ জন শহরের ভেতরে অবস্থান করছেন। সংবেদনশীল এলাকায় পুলিশের ফ্ল্যাগ মার্চও সম্পন্ন হয়েছে।

মহিলা নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মহিলা কুইক রেসপন্স টিম (QRT)-এর ছয়টি দল এবং বিরঙ্গনা ইউনিটকেও সক্রিয় করা হয়েছে। দক্ষিণ বেরেলির এসপি অংশিকা বর্মা জানান, “যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।”

এছাড়াও, জেলার প্রশাসন নাগরিকদের জন্য দুটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে। সওরভ দুবে বলেন, “উৎসব বা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ থাকলে এই নম্বরগুলিতে ফোন করে জানানো যেতে পারে।”

প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কেউ গুজব ছড়ালে বা উত্তেজনা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উৎসবের মরসুমে শান্তি বজায় রাখা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য।