বেরেলি (উত্তরপ্রদেশ): এক যুবকের জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ, মানসিক প্রভাব তৈরি এবং পরে সাইবার জালিয়াতি ও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের অভিযোগে উত্তাল যোগীরাজ্য। অভিযোগ উঠেছে সমীর, আসিফ খান, ইউনুস কুরেশি এবং ইমরান নামে চারজন যুবক মিলে আমরিশ গোস্বামী নামে এক যুবককে লক্ষ্য করে প্রথমে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, তারপর ধীরে ধীরে তাকে একটি পরিকল্পিত চক্রে ফাঁসায়।
পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রথম দিকে স্বাভাবিক বন্ধুত্বের নামে মেলামেশা হলেও কিছুদিন পর আমরিশের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং তাকে এমন সব খাবার খেতে বাধ্য করা হয় যেগুলো তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে।
এরপর বিভিন্ন আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে তাকে ধর্মীয় রীতি শিখতে বাধ্য করা হয় এবং শেষমেশ জোরপূর্বক একটি মসজিদে নিয়ে গিয়ে কালমা পড়িয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো হয়। ধর্মান্তরের পর আমরিশের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মোহাম্মদ রাজা’।
পরিবারের দাবি, এখানে ধর্মান্তকরণই চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল না এটি ছিল বহু ধাপের একটি অপরাধচক্রের অংশ। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্তরা আমরিশকে ব্যবহার করে মুম্বইয়ে কমপক্ষে ১৪টি ভুয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলায়। এই সমস্ত অ্যাকাউন্ট সাইবার জালিয়াতি এবং সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদী আর্থিক লেনদেনে ব্যবহৃত হতো বলেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান।
তদন্ত নথি অনুযায়ী, ধর্মান্তরের মাধ্যমে নতুন পরিচয়ের আড়ালে অপরাধমূলক অর্থপাচার চালানোই ছিল চক্রটির মূল উদ্দেশ্য। পরিবর্তিত নাম ও পরিচয় থাকলে পুলিশের নজর এড়িয়ে আর্থিক ট্র্যাকিং প্রতিরোধ করা যায় এই সুবিধা নিতেই আমরিশকে ধর্মান্তরিত করে চক্রটি পরিকল্পনা সাজায় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ঘটনার পর হদিশ না পেয়ে পরিবার প্রথমে থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করে। সেই সূত্র ধরে তদন্তকারীরা যখন মোবাইল ট্র্যাকিং ও ব্যাংক ট্রানজেকশন পরীক্ষা করতে শুরু করেন, তখন পর্দা ফাঁস হয় জটিল নেটওয়ার্কের। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুবকের আচরণ ও মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন ঘটিয়ে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল — যা এক ধরনের ‘ব্রেনওয়াশিং’ বা মানসিক প্রভাব তৈরি করে নিয়ন্ত্রণ করা’র কৌশল।
ইতিমধ্যে অভিযুক্ত সমীর, আসিফ খান, ইউনুস কুরেশি এবং ইমরানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৪টি ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কোন কোন ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিল, কার কার নামে টাকা ঢুকত এবং ওই টাকা কোথায় পাঠানো হত সেই পুরো আর্থিক নেটওয়ার্ক ট্র্যাক করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও তদন্তে যুক্ত হয়েছে।
পুলিশের অনুমান, উত্তরপ্রদেশ–মুম্বই সংযোগ অতিক্রম করে চক্রটির টেনেটুনে দেশের অন্য রাজ্য এমনকি বিদেশে পর্যন্ত প্রসার থাকতে পারে। সাইবার জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং এবং ধর্মান্তর–ভিত্তিক অপরাধ এই তিনটি বিষয় এক জায়গায় মিলেছে বলেই তদন্তকারীরা ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।
এদিকে পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে, ধর্ম, সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বের নামে তরুণদের লক্ষ্য করে একটি বড় অপরাধচক্র সক্রিয় হতে পারে। অপরাধীগোষ্ঠী প্রথমে টার্গেট ব্যক্তিকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে, তারপর নতুন পরিচয়ের আড়ালে অপরাধে ব্যবহার করে এমন অভিযোগ সামনে আসছে।
বর্তমানে আমরিশ পুলিশি সুরক্ষায় রয়েছে এবং কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, কেবল অপরাধীদের শাস্তি নয়—এই ধরনের চক্র কীভাবে তরুণদের কাজে লাগায়, সেই প্রক্রিয়াও ভেঙে দেওয়া জরুরি।


