উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি জেলায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত এবং দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার রাত প্রায় ১০টায় কল্যাণী নদীর উপর কুতলুপুর গ্রামের কাছে দেবা থানা এলাকার একটি সেতুতে গাড়ি এবং ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহত সকলেই গাড়ির যাত্রী এবং তারা ফতেপুর শহরের বাসিন্দা।
দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি ভাড়ায় নেওয়া হয়েছিল এবং যাত্রীরা বাইরে থেকে ফতেপুর ফিরছিলেন। গাড়িতে মোট আটজন যাত্রী ছিলেন—পাঁচজন পুরুষ এবং একজন মহিলা নিহত হয়েছেন, বাকি দু’জন গুরুতর আহত। সংঘর্ষের ধাক্কা এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে, নতুন দেখতে গাড়িটি (যার নম্বর প্লেট ছিল না) সম্পূর্ণভাবে ম্যাঙ্গলড হয়ে যায়। রাস্তা থেকে গাড়ি সরাতে ক্রেনের সাহায্য নিতে হয়েছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের প্রথমে কাছাকাছি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যায়, পরে জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। চারজন ঘটনাস্থলেই মারা যান, বাকি দু’জন হাসপাতালে পৌঁছে মৃত্যুবরণ করেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শশাঙ্ক ত্রিপাঠী এবং পুলিশ সুপার অর্পিত বিজয়বর্গীয় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। ত্রিপাঠী বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গাড়িটি ট্রাকের লেনে ঢুকে পড়েছিল, যার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।”
পুলিশ সুপার বিজয়বর্গীয় জানান, যাত্রীরা আউটস্টেশন ভ্রমণের জন্য গাড়িটি ভাড়া করেছিলেন। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ট্রাকটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলছিল এবং বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করেছে, কিন্তু চালক পলাতক। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) বিকাশ চন্দ্র ত্রিপাঠী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে উভয় যানবাহনের অতিরিক্ত গতি দায়ী বলে মনে হচ্ছে। মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই দুর্ঘটনার ফলে সেতুতে যানজটের সৃষ্টি হয় এবং যান চলাচল ব্যাহত হয়। স্থানীয়রা জানান, এই সেতুটি প্রায়ই দুর্ঘটনাপ্রবণ, কারণ রাতের বেলা আলোর অভাব এবং রাস্তার সংকীর্ণতা। পুলিশ এখন সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে তদন্ত চালাচ্ছে। ট্রাক চালককে ধরতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
এই ঘটনা ফের সড়ক নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে। উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার বেশিরভাগই অতিরিক্ত গতি, ভুল লেন এবং রাতের অন্ধকারের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুতে গতি নিয়ন্ত্রণ, আলোক ব্যবস্থা এবং লেন চিহ্নিতকরণ জরুরি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে প্রশাসন। আহতদের চিকিৎসা চলছে এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। চালকদের গতি মেনে চলা, রাতে সতর্কতা এবং যানবাহনের যান্ত্রিক পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। পুলিশের তরফে ট্রাক চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে এবং শিগগিরই মামলা দায়ের করা হবে।


