৪৯ বছর পর বাঁকে বিহারী মন্দিরের তোষাখানা খুলে চোখ কপালে সবার

banke-bihari-temple-treasure-room-opened

মথুরা: উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত বৃন্দাবনের বাঁকে বিহারী মন্দিরে শনিবার ঘটল ঐতিহাসিক ঘটনা। প্রায় অর্ধশতাব্দী পর, ৪৯ বছর পর খোলা হল মন্দিরের গোপন ‘তোশাখানা’ বা খাজানার ঘর। ১৯৭১ সাল থেকে এই ঘরটি সিল করে রাখা হয়েছিল, এবং অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত হাই-পাওয়ার্ড কমিটির আদেশে তা খোলা হয়।

Advertisements

এই ‘তোশাখানা’ ঘিরে বহু বছর ধরেই প্রচলিত ছিল নানা গুজব কেউ বলতেন এর ভিতরে অমূল্য সোনা-রূপার গয়না রয়েছে, কেউ দাবি করতেন দেবতার ব্যবহৃত প্রাচীন ধাতব সামগ্রী বা ঐতিহাসিক দলিল লুকিয়ে আছে। শনিবার দুপুরে সেই রহস্য উন্মোচনের সময় উপস্থিত ছিলেন আদালত নিযুক্ত আধিকারিক, স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি, এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ।

‘ক্ষমতা থাকলে এক ঘণ্টাতেই সিদ্ধান্ত নিতাম’, বিস্ফোরক শুভেন্দু

ঘরটি খোলার পর পাওয়া যায় কিছু পিতলের বাসন, কাঠের সামগ্রী ও কয়েকটি পুরনো বাক্স। তবে প্রত্যাশিতভাবে কোনও সোনা, রূপা বা মূল্যবান ধাতু পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ জানায়, বাক্সগুলির ভিতরে থাকা জিনিসপত্র পরীক্ষা করে সংরক্ষণে পাঠানো হবে। মন্দির কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, “এটি মূলত দেবতার প্রাচীন ব্যবহার্য সামগ্রী রাখার কক্ষ ছিল। এখানে অর্থমূল্য নয়, ঐতিহাসিক মূল্য বেশি।”

তবে এই ঘটনার বিরোধিতা করেছে গোস্বামী সম্প্রদায়। তাঁদের দাবি, এই ঘর খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাঁদের মতামত না নিয়েই। এক গোস্বামী প্রতিনিধি বলেন, “তোশাখানা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। আদালতের আদেশে হঠাৎ এটি খোলা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে।”

Advertisements

অন্যদিকে, প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, মন্দিরের আয় ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একাধিক মামলা চলছিল। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট একটি হাই-পাওয়ার্ড কমিটি গঠন করে, যাতে স্বচ্ছতা বজায় রেখে মন্দিরের আর্থিক রেকর্ড ও সম্পদের হিসাব পর্যালোচনা করা হয়।

মন্দিরের ইতিহাসবিদরা বলছেন, বাঁকে বিহারী মন্দির বৃন্দাবনের অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় মন্দির। ১৮৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরে প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত আসেন। এখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ‘বিহারী’ রূপে পূজা হয়। তাই এই মন্দিরের প্রতিটি সামগ্রী, এমনকি পুরনো পিতলের বাসনও, ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই ঘটনার পর মন্দিরের ভিতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, সমস্ত সামগ্রী ভিডিওগ্রাফি করে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে কোনও জল্পনা না ওঠে। অন্যদিকে, স্থানীয়দের একাংশের মতে, “৪৯ বছর ধরে যা লুকানো ছিল, তা খোলার ফলে অবশেষে রহস্যের পর্দা সরল। কিন্তু এতে যেন ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত না লাগে।”

সামগ্রিকভাবে, ব্যাংকেবিহারী মন্দিরের ‘তোশাখানা’ খুলে যাওয়ায় যেমন দীর্ঘদিনের কৌতূহলের অবসান ঘটেছে, তেমনই নতুন প্রশ্নও উঠেছে অতীতের এই সিদ্ধান্তগুলো কেন এত বছর অন্ধকারে ছিল, এবং ভবিষ্যতে মন্দিরের ঐতিহ্য রক্ষায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা এখন নজরে থাকবে দেশজুড়ে।