ভারতে বিদেশি অপরাধীর সংখ্যায় শীর্ষে বাংলাদেশ, অনেক পিছিয়ে পাকিস্তান

ভারতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বিদেশি নাগরিকদের তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম শীর্ষে। ২০২২ সালের জন্য জাতীয় অপরাধ নথি ব্যুরোর (NCRB crime report) প্রকাশিত রিপোর্টে এই তথ্য উঠে…

Bangladeshi Nationals Top List of Foreign Offenders in India

ভারতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বিদেশি নাগরিকদের তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম শীর্ষে। ২০২২ সালের জন্য জাতীয় অপরাধ নথি ব্যুরোর (NCRB crime report) প্রকাশিত রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে।

   

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ভারতে মোট ৩,৬৪২ জন বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১,৮৩৯ জনই বাংলাদেশের নাগরিক—অর্থাৎ মোট অভিযুক্ত বিদেশিদের ৫০.৫ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে পাকিস্তানি নাগরিকদের সংখ্যা ছিল অনেক কম, মাত্র ৪৪ জন।

শীর্ষে বাংলাদেশ, কারণ কী?

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সীমান্ত এবং অবৈধ অনুপ্রবেশই এই পরিসংখ্যানের প্রধান কারণ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দীর্ঘ, জটিল ও অনেক জায়গায় দুর্বলভাবে সুরক্ষিত। বহু মানুষ দারিদ্র্য, চাকরির অভাব বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে।

অনুপ্রবেশের পর এদের অনেকেই জাল নথিপত্র তৈরি করে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, এবং এরপরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে—যেমন মাদক পাচার, মানব পাচার, জাল পাসপোর্ট তৈরি, চুরি-ছিনতাই কিংবা বেআইনি ব্যবসা।

অন্যান্য দেশের অবস্থান

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া, যার ৬৪০ জন নাগরিক অভিযুক্ত। নাইজেরীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে মূলত সাইবার প্রতারণা, অর্থ তছরুপ ও মাদক পাচারের মতো অপরাধে নাম জড়িয়েছে। তৃতীয় স্থানে নেপাল (২৬৬), চতুর্থ শ্রীলঙ্কা (৮৭), আর পঞ্চম স্থানে পাকিস্তান (৪৪)। পাকিস্তানি নাগরিকদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের বিরুদ্ধে গোপনচরবৃত্তি, সন্ত্রাসবাদে মদত বা বেআইনি অনুপ্রবেশের মতো গুরুতর অভিযোগ থাকে।

ভারতে অপরাধে বিদেশিদের ভূমিকা বাড়ছে?

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে এখনও দেশের মোট অপরাধের একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও, কিছু নির্দিষ্ট রাজ্য ও অঞ্চল—বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে—এই প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, দিল্লি, মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক—এই রাজ্যগুলিতে বিদেশি অপরাধীদের প্রভাব তুলনামূলক বেশি। পশ্চিমবঙ্গে মূলত বাংলাদেশি নাগরিকদের মাধ্যমে অবৈধ কার্যকলাপের সংখ্যা বেশি।

Advertisements

কী ধরনের অপরাধে জড়িত বিদেশিরা?

NCRB-এর তথ্য বলছে, বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশ, পাসপোর্ট আইনের লঙ্ঘন, মাদক পাচার, সাইবার প্রতারণা ও নারী পাচারের অভিযোগে। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশিরা স্থানীয় অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করে।

সরকারি উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ

বিদেশি নাগরিকদের অপরাধ রুখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে—সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে কেবল নিরাপত্তা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সচেতনতা, স্থানীয় সমাজের অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাও জরুরি।

ভারতে বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা যতই কম হোক না কেন, বিষয়টি নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্যের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত শেয়ার করার ফলে যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, তা রোধে কৌশলগত ও বহুমাত্রিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির সমন্বিত প্রয়াস এখন সময়ের দাবি।