ভোপাল: দীর্ঘ আট বছর ধরে হিজড়ে নারীর (Bangladeshi) ছদ্মবেশে ভারতে পরিচয় গোপন করে বসবাসকারী এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে অবশেষে গ্রেফতার করল মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা। অভিযুক্তের নাম আবদুল কালাম, যিনি ‘নেহা কিন্নর’ নামেই পরিচিত ছিলেন ভোপালের বুধওয়ারা এলাকায়। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছিলেন এবং নিজের জন্য জাল আধার কার্ড, ভোটার আইডি ও ভারতীয় পাসপোর্টও তৈরি করেছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে গোপনে বসবাস
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ১০ বছর বয়সে আবদুল বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেন এবং প্রথমে মহারাষ্ট্রের মুম্বই শহরে প্রায় ২০ বছর বসবাস করেন। এরপর তিনি চলে আসেন মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে। গত আট বছর ধরে তিনি নেহা কিন্নর নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও তাকে একজন হিজড়ে নারী বলেই জানতেন। এই পরিচয়ের আড়ালে তিনি প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দীর্ঘদিন এখানে বসবাস করেছেন।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান
ভোপাল পুলিশ সোমবার ও মঙ্গলবার মধ্যবর্তী রাতে একটি গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিনিয়র পুলিশ অফিসার শালিনী দীক্ষিত। তিনি জানান, “গোপন সূত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে আসে। তারপর থেকেই নজরদারি শুরু হয়। দীর্ঘ তদন্তের পর আমরা নিশ্চিত হই যে নেহা আসলে আবদুল কালাম নামক একজন বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বহু বছর ধরে ভারতীয় নাগরিকের ছদ্মবেশে রয়েছেন।”
জাল নথিপত্র ও নিরাপত্তা প্রশ্ন
তদন্তকারীরা আবদুলের কাছ থেকে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট, আধার কার্ড, ভোটার আইডি এবং অন্যান্য নথিপত্র উদ্ধার করেছেন, যেগুলি সবই জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই নথিগুলির সাহায্যে তিনি একাধিকবার বাংলাদেশ যাতায়াত করেছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এই ধরনের জাল নথি তৈরি হল এবং কাদের সাহায্যে তিনি এইসব করলেন?
জাতীয় নিরাপত্তায় বড় প্রশ্নচিহ্ন
আবদুলের গ্রেফতারের পর গোটা ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তার বড়সড় ফাঁকফোকর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক ও ষড়যন্ত্র খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই তদন্তে নামানো হয়েছে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (IB) ও সন্ত্রাস দমন শাখা (ATS)-কে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা আবদুলের মোবাইল ফোনের কললগ, মেসেজ ও ডেটা বিশ্লেষণ করছেন, যাতে বোঝা যায় তিনি কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা বা অন্য কোন চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কিনা।
হিজড়া সেজে প্রতারণা?
পুলিশ এখন আবদুলের প্রকৃত লিঙ্গ নির্ধারণে মেডিকেল টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। শালিনী দীক্ষিত জানান, “আমরা তদন্ত করে জানতে চাই, তিনি সত্যিই হিজড়ে কিনা নাকি নিজেকে হিজড়া হিসেবে উপস্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় গোপন করেছেন।” ইতিমধ্যেই স্থানীয় হিজড়া সম্প্রদায়ের একাধিক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তারা কীভাবে তাকে চিনতেন এবং তার পরিচয় সম্পর্কে জানতেন কিনা।
কড়া নিরাপত্তায় জেরা
আবদুল বর্তমানে তালাইয়া থানা হেফাজতে রয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আলাদা করে দুটি মহিলা অফিসার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক নিযুক্ত রয়েছেন। কেউই বিনা অনুমতিতে তার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককেও গোটা বিষয়ে অবগত করা হয়েছে এবং তদন্তে যুক্ত হয়েছে একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
মিছিলে ঠাসা কলকাতা, ২১ জুলাই ঘিরে বিশেষ ট্রাফিক জারি
৩০ দিনের জন্য হেফাজতে
আবদুলের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, জাল নথি প্রস্তুত ও জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। তাকে আপাতত ৩০ দিনের জন্য হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং প্রশাসন তার বিরুদ্ধে নির্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে।
শেষ কথা
এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হয়ে গেল, কিভাবে একটি সুপরিকল্পিত ছদ্মবেশে একজন অনুপ্রবেশকারী এত বছর ধরে ভারতীয় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে থেকেছে। একইসঙ্গে উঠে এসেছে ভারতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি। গোটা ঘটনার উপর এখন দেশের নজর, এবং তদন্তে সামনে কী উঠে আসে তা নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে।