RAW আতঙ্কে ভুগছে বাংলাদেশ

বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশজুড়ে বাড়ছে ভারতবিরোধী মনোভাব। এমন এক অবস্থায়, বাংলাদেশে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর কার্যক্রম নিয়ে…

Bangladesh on Rising Concerns Over RAW

বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশজুড়ে বাড়ছে ভারতবিরোধী মনোভাব। এমন এক অবস্থায়, বাংলাদেশে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা RAW (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং)-এর কার্যক্রম নিয়ে বাড়ছে চর্চা। দেশের ইসলামিক কট্টরপন্থীরা প্রতিটি বড় ঘটনা ও দুর্ঘটনার পেছনে RAW-এর ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছেন।

সম্প্রতি মেঘনা নদীতে একটি জাহাজে ছয়জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় জাহাজেরই কর্মী ইরফানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ছুটি সংক্রান্ত বিষয়ে বিবাদ থেকেই খুনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু বাংলাদেশি কট্টরপন্থীরা এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, ইরফান আসলে ভারতের RAW-এর এজেন্ট। তাদের দাবি, ইরফানের প্রকৃত নাম আকাশ মণ্ডল, যে একজন অমুসলিম। ইসলামিক পরিচয় ছদ্মবেশ হিসেবে ব্যবহার করে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

   

এ ধরনের অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। শিয়া ও সুন্নি গোষ্ঠীর সংঘাত ছাড়াও তাবলিগ জামাতের দুই উপদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কট্টরপন্থীদের মতে, এসব সংঘর্ষের নেপথ্যে রয়েছে RAW-এর ষড়যন্ত্র।

এছাড়াও, মায়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান তৎপরতাকেও RAW-এর পরিচালিত কার্যক্রম বলে দাবি করেছেন অনেকে। বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন এবং তাদের নিরাপত্তা প্রশ্নেও ভারতের দোষারোপ করা হচ্ছে। কট্টরপন্থীদের দাবি, এসব কাজ করে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন। বিশেষত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্প্রতি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে কড়া বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি, এই ইস্যুতে বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে। তবে, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তীব্র ভারতবিদ্বেষ
বাংলাদেশের ইসলামিক মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলি বরাবরই তীব্র ভারতবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে এসেছে। একসময় এই গোষ্ঠীগুলিই “বয়কট ভারত” আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। তাদের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ভারতই দায়ী।

বাস্তবতা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
RAW-কে ঘিরে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীদের এই আতঙ্ক ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বাস্তবতার সঙ্গে কতটা সম্পর্কযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ঘটনায় RAW-এর হাত রয়েছে বলে দাবি করা হাস্যকর। তবে, ভারতের প্রতি এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব দুই দেশের সম্পর্কে আরও উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকার এবং সাধারণ নাগরিকদের একাংশ এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মনে করেন। তাদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে কট্টরপন্থীরা অযথা ভারতের দোষারোপ করছে।

বাংলাদেশে RAW-কে ঘিরে বাড়তি আতঙ্ক এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পাশাপাশি, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিষয়টি নিয়ে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।