ঢাকা: বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের (Bangladesh ISI) পর থেকেই আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছিল নতুন সরকারের বিদেশ নীতি, নিরাপত্তা ভাবনা এবং বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে বেড়ে ওঠা ঘনিষ্ঠতা ঘিরে। এবার সেই আশঙ্কাকেই কার্যত নিশ্চিত করলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল।
একটি বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি অভিযোগ করলেন বাংলাদেশের মাটিতে ইতিমধ্যেই ঘাঁটি গেড়েছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI, আর সেই কর্মকাণ্ডে পরোক্ষ সহায়তা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস।
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে ইন্টারপোল সাহায্য চাইছে ঢাকা
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান দু’জনকেই সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে। সেই বিচারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেই দাবি করছেন তাঁরা। তবে সাক্ষাৎকারে ভারতের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নাশকতা এবং বাংলাদেশে ISI-র ভিত গজিয়ে ওঠা নিয়ে তাঁর মন্তব্য নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমাদের আমলে এক ইঞ্চি জমিও কোনও সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীর কাজে ব্যবহার হতে দিইনি। কিন্তু এই সরকার সব জঙ্গিকে মুক্ত করে দিয়েছে। তারা আবার অফিস খুলেছে, বাহিনী তৈরি করছে। আমি নিশ্চিত শুধু বাংলাদেশে নয়, প্রয়োজনে ভারতে পাঠাতেও তারা পিছপা হবে না।” প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি, পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু চক্র এখন খোলাখুলিভাবে কাজ করছে। এমনকি বাংলাদেশের সেনাকেও পাশ কাটিয়ে ISI ঢুকে পড়েছে দেশের নিরাপত্তা কাঠামোর ভেতরে।
তিনি বলেন, “আজ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে আসছে। শুনছি ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ISI কার্যত অফিস চালাচ্ছে। গত বছরের অস্থিরতার পিছনেও তাদের হাত ছিল।” এই মন্তব্য যে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা-রাজনীতিতে নতুন উদ্বেগ তৈরি করবে, তা স্পষ্ট।
জামাতের উত্থান এবং ইউনূসের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি সবচেয়ে বড় অভিযোগটি এসেছে জামাত-ই-ইসলামি এবং নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলির উত্থান নিয়ে। আসাদুজ্জামানের দাবি ইউনূস সরকার কার্যত জামাতের হাতে বন্দি, এবং তারাই এখন নেপথ্যে ক্ষমতার লাগাম টানছে।
তিনি বলেন, “যারা এখন ইউনূসের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা হল জামাত ইসলাম এবং হিন্দ-ই-তেহরিকের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ এই সংগঠনগুলিকে প্যাট্রোনাইজ করেছেন ইউনূস।” একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন ১/১১ পর্বের ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলার কথা।
দাবি করেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র তখন সফল না হলেও, এবার বহিরাগত শক্তির মদতে ইউনূস সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন। এমনকি তিনি অভিযোগ করেন “চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়েছেন ইউনূস। যা কোনওদিন শেখ হাসিনা করেননি।”
সাম্প্রতিক সপ্তাহে ভারতে একাধিক বিস্ফোরণ ও নাশকতার ঘটনার পর থেকেই গোয়েন্দা মহলে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছিল—বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য সেই প্রশ্নকে আরও তীব্র করে তুলেছে। তিনি বলেন, “আমাদের আমলে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও কার্যকলাপ হতে দিইনি। কিন্তু এখন কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে না। প্রয়োজনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে তারা ভারতেও পাঠাবে।”
এই বক্তব্য শুধু ঢাকার রাজনীতিতেই নয়, দিল্লির কূটনৈতিক মহলেও আলোড়ন তুলতে বাধ্য। প্রাক্তন মন্ত্রী আসাদুজ্জামানের এই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার সরাসরি ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলেছে, পাকিস্তান–জামাত আঁতাতের ইঙ্গিত দিয়েছে এবং ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, এই সাক্ষাৎকার সেই অস্থিরতাকে আরও তীব্র করে তুলল।


