বাংলাদেশের (Bangladesh Hindu) গোপালগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বারা গণহত্যা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনগুলি তাদের এক্স হ্যান্ডেলে একটি জরুরি পোস্ট করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, “আমরা, বাংলাদেশের হিন্দুরা, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে জরুরিভাবে সাহায্য চাইছি।
বাঁচার জন্য আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হিন্দুদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে।” এই আবেদনে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবদানের কথা উল্লেখ করে হিন্দু সম্প্রদায় বলেছে, সেই ঐতিহাসিক সহযোগিতার কথা মাথায় রেখেই তারা ভারতের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে।
গোপালগঞ্জে হিংসার প্রেক্ষাপট
গোপালগঞ্জ, যিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেলা হিসেবে পরিচিত, সেখানে সম্প্রতি ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) নামে একটি ছাত্র-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দলের সমাবেশের সময় ব্যাপক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। এক্স পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ১৬ জুলাই রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এনসিপি, জামায়াত-ই-ইসলামী, বিএনপি এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে যৌথভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়েছে।
এই হামলায় বেশ কয়েকজন হিন্দু নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। একটি পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গৌতম গাইন নামে একজন হিন্দু নৈশপ্রহরীকে ৯ জুলাই নিখোঁজ হওয়ার পর ১১ জুলাই তাঁর হাত-পা কাটা দেহ উদ্ধার করা হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি
হিন্দু সংগঠনগুলি তাদের আবেদনে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছে, যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সেই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী বাঙালি হিন্দুদের উপর গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়েছিল।
আনুমানিক ৩০ লক্ষ মানুষ নিহত এবং ২০০,০০০ থেকে ৪০০,০০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। হিন্দুরা বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু ছিল, এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রায় ৮০ লক্ষ হিন্দু ভারতে শরণার্থী হিসেবে পালিয়েছিল। এই ঐতিহাসিক সহযোগিতার কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পুনরায় সাহায্য চেয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও ভয়ের পরিবেশ
গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এনসিপি’র সমাবেশে গুলি চালিয়েছে, যাতে দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), এবং সোহেল মোল্লা (৪১) নামে তিনজন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
এক্স পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ১৪৪ ধারা জারি করে রাতের আঁধারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, যেখানে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি জামায়াত-ই-ইসলামী এবং বিএনপি’র মতো গোষ্ঠীও জড়িত। স্থানীয় হিন্দুরা জানিয়েছেন, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরের উপর হামলা হচ্ছে। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ভারত সরকার বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার নিন্দা করে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত চরমপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এছাড়া, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার নিন্দা করে তাদের অধিকার সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। তবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেদন
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়, যারা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ, দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার। ১৯৫১ সালে হিন্দুরা ছিল জনসংখ্যার ২২ শতাংশ, কিন্তু ১৯৭১ সালের গণহত্যা এবং পরবর্তী সময়ে ক্রমাগত নির্যাতনের ফলে এই সংখ্যা এখন ৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক হিংসা এই নির্যাতনের ধারাবাহিকতা বলে মনে করা হচ্ছে। হিন্দু সংগঠনগুলি বলছে, তারা বাঁচার জন্য যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত। তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে সরাসরি হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছে, যাতে তাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা পায়।
ওয়ালমার্টের বড় পদক্ষেপে কয়েকশো স্টোর-সাপোর্ট-প্রশিক্ষণ চাকরি বাতিল
গোপালগঞ্জে হিন্দুদের উপর হিংসা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নকে আবারও সামনে এনেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হিন্দুদের আবেদন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। তবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে এই সংকটের সমাধান করে, তা ভবিষ্যতে দেশের ধর্মীয় সহাবস্থানের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবন ও নিরাপত্তা রক্ষায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা এখন সর্বাধিক জরুরি।