বাংলাদেশের ‘ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির’, চট্টগ্রাম দখলের পথে আরাকান, সীমান্তে প্রস্তুত ভারত

বিখ্যাত বাংলা প্রবাদ ‘ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির’। উভয় বিপদ বোঝাতে এই বাগধারাই প্রচলিত। কিন্তু এই বাগধারাই এখন শিয়রে সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh)। একদিকে হিন্দু…

Bangladesh is facing threat from neighbours as Dhaka detoriates its relation with India and Myanmar

বিখ্যাত বাংলা প্রবাদ ‘ডাঙায় বাঘ, জলে কুমির’। উভয় বিপদ বোঝাতে এই বাগধারাই প্রচলিত। কিন্তু এই বাগধারাই এখন শিয়রে সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh)। একদিকে হিন্দু নির্যাতনের (Hindu Atrocities) জেরে তলানিতে ঠেকেছে ভারত-বাংলাদেশের (India Bangladesh relation) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। তারমধ্যে ইস্কনের সন্ন্যাসী চিন্ময় দাসের গ্রেফতারির পর আরও জোরদার হয়েছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন। এমন পরিস্থিতিতে ভারত বিরোধী জিগির তুলে দিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা আরও উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে প্রতিবেশি দেশের জামাত সহ বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠনগুলি। কখনও কলকাতা দখল তো কখনও আগরতলা অভিযানের মতো ভারত বিরোধিতার জিগির তুলে দেশের রাজনৈতিক মহলে জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছে বিএনপির মতো দলগুলি। এই অকারণে যুদ্ধের জিগির স্বাভাবিক ভাবেই উত্তপ্ত করেছে প্রতিবেশি দুই দেশের সম্পর্ক।

বাড়ছে উত্তাপ! মেঘালয় সীমান্তে নজরদারি ড্রোন মোতায়েন বাংলাদেশের

   

এমন অবস্থায় চুপ করে বসে নেই নয়াদিল্লিও। সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ভারত বিরোধিতা নিয়ে ইতিমধ্যেই কড়া বার্তা দিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে সেই প্রতিক্রিয়া পেতেই আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ইউনূসের (Md.Yunus)  সরকার। সীমান্তে জুড়ে মোতায়েন করেছে তুরস্কের পাঠানো ড্রোন। 

এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকল্প পথের কথাও ভাবছে ভারত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম-মনিপুর সংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্তে বিপুল সেনা (Indian Army) মোতায়েন করেছে ভারত। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের (Bangladesh) চট্টোগ্রাম (Chattogram) জেলা সংলগ্ন সীমান্তের কাছেই প্রায় ৩৫,০০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের দিকে তাক করা হয়েছে পিনাকা গাইডেড মিসাইল। যার রেঞ্জ ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার। প্রয়োজনে পরমানু অস্ত্র বহনেও সক্ষম এই ক্ষেপনাস্ত্র। ইতিহাসে প্রথমবার বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের এই বিপুল সেনা (Indian Army) মোতায়েন নিঃসন্দেহেই উদ্বেগ বাড়িয়েছে ইউনুস সরকারের।

এমন অবস্থায় ভারতের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে ঝগড়া করতে গিয়েই নিঃশব্দে বিপদকে কাছে টেনে আনলো ঢাকা। গত ১০ ডিসেম্বর চট্টোগ্রাম সীমান্ত সংলগ্ন মংডু শহর দখল নিয়েছে মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (Arakan Army)। চট্টোগ্রাম সীমান্তে বয়ে চলা নাফ নদীর পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এই গোষ্ঠীটি। রোহিঙ্গা অধুষ্যিত রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এই মুহূর্তে সবথেকে বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এখন বাংলাদেশিদের কাছে আতঙ্কের অপর নাম আর নাফ নদী । কারণ কোনও বাংলাদেশি দেখলেই গুলি চালাতে এক সেকেন্ডও ভাবছে না আরাকাররা। কূটনৈতিকমহলের মতে এমন ভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো চট্টগ্রাম হারাতে হতে পারে বাংলাদেশকে।

৭১’র যুদ্ধের ঐতিহাসিক ছবি সরাল ভারতের সেনা প্রধান, কূটনৈতিক বার্তা ঢাকাকে?

অন্যদিকে, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ গড়ে তুলতে মায়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চাইছে ভারত। সেই কারণেই মায়ানমারের সিতওয়েতে ভারতের কালাদান বন্দর, সড়ক যোগাযোগ ও গ্যাস পাইপলাইন সহ একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেছে নয়াদিল্লি। সেই আর্থিক স্বার্থেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন করেছে সাউথব্লক। কারণ ওই বিনিয়োগগুলির স্বার্থ সুরক্ষিত থাকলে আগামীতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের প্রভাব অক্ষুন্ন থাকবে বলেই মনে করে কূটনৈতিক মহল।

চিনকে রুখতে এবার মায়ানমারের বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে ভারত (India)। একদিকে চিন মদতপুষ্ঠ মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব একটা সুমধুর নয় নয়াদিল্লির। তারমধ্যে বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থাণ চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নয়াদিল্লির কপালে। এমন অবস্থায় উত্তর-পূর্ব ভারতের নিরাপত্তা ও চিনের প্রভাব প্রতিহত করার স্বার্থে মায়ানমারের (India Myanmar relation) বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চাইছে সাউথব্লক। এই কৌশলের পেছনে কতগুলি কারণ রয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। গত নভেম্বরেই নয়াদিল্লিতে বিদেশমন্ত্রকের (Ministry of External affiars) ও Indian Council for World Affairs (ICWA)-এর একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির নেতাদের। তবে সেখানে কী কী আলোচনা হবে তা গোপন রাখা হয়।

কূটনৈতিক মহলের মতে, বর্তমানে মায়ানমারে জুন্টা সরকারের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রেখেছে পশ্চিমী দুনিয়া। কিন্তু তবুও ২০২১ সালে জুন্টাদের উত্থানের পর সেই সামরিক সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত। কিন্তু জুন্টাদের পেছনে বেজিং-এর সামগ্রীক মদত থাকায় নয়াদিল্লির সঙ্গে চেয়েও সম্পর্ক উন্নতি করতে পারেনি নেপিদের সামরিক সরকার। এদিকে গতবছর ২০২৩ থেকেই জুন্টা বিরোধী বিদ্রোহে সেদেশের অধিকাংশ অঞ্চলই নিজেদের দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি, চিন ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট কিংবা কুকি-চিনের মতো একাধিক আরাকান বিদ্রোহী সংগঠনগুলি। 

মহাকাশের পর এবার সমুদ্রগর্ভে, ভারত মহাসাগরের গভীরে অভিযানে NIOT

ফলে দেশের মাটিতে জমি হারিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় মায়ানমারের জুন্টা সরকার। এদিকে বিদ্রোহীদের সমর্থনে তাঁদের হয়ে লড়ছে একাধিক পশ্চিমী মার্সেনারিস (ভাড়াটে সৈন্য)। সুতরাং জুন্টা সরকারের পতন এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা। আর এমন অবস্থায় আরাকান আর্মি যেভাবে বাংলাদেশ সীমান্তের দখল নিয়েছে তাতে রীতিমতো বেকায়দায় মৌলবাদী সমর্থিত ইউনূস সরকার। একদিকে যখন ভারতের সঙ্গে যেচে বিরোধ বাঁধিয়েছেন তখন অন্যদিকে আরাকান বিদ্রোহীদের কাছে চট্টোগ্রাম খোয়ানোর ভয় রীতিমতো তাড়া করে বেরাচ্ছে এই শান্তির নোবেলজয়ী ব্যর্থ প্রশাসককে। সুতরাং আগামীদিনে বাংলার বহুল প্রচলিত প্রবাদ ‘আমও গেল ছালাও গেল’ সেটাই বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা সেদিকেই তাকিয়ে কূটনৈতিক মহল।