দিল্লির লালকেল্লার সামনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে চরম সতর্কতা জারি হয়েছে, তার প্রতিফলন পাওয়া গেল উত্তর প্রদেশের বাহারাইচে। সীমান্তবর্তী এই জেলায় পুলিশ দুই সন্দেহভাজন বিদেশিকে আটক করেছে। যাদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ এবং এবং অন্য জন পাকিস্তানি। যাদের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। বিস্ফোরণের পর থেকেই গোটা উত্তর প্রদেশে যে টহল ও নজরদারি জোরদার হয়েছে, এই গ্রেফতার তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
বহিরাগতদের চলাফেরা, যোগাযোগ ও নথিপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে পুলিশ দুই জনের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক তথ্য পায়। আটক হওয়া দুই বিদেশির মধ্যে রয়েছেন এক ব্রিটিশ নাগরিক সুমিত্রা শাকিল, এবং অপরজন পাকিস্তানি নাগরিক হাসান অম্মান।
বিহার জয়ের পরেই মোদীর মুখে মেরুকরণ বার্তা
স্থানীয় সূত্রের দাবি, দু’জনের আচরণ, অবস্থান এবং যাতায়াত প্রথম থেকেই পুলিশের নজরে পড়ে। পুলিশ যখন তাঁদের নথি পরীক্ষা করে, তখনই মিলিয়ে দেখে যে তাঁদের কাগজপত্র ভারতের আইনি প্রবেশ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, দু’জনের ভিসা, পরিচয়পত্র এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত কাগজের মধ্যে একাধিক অসংগতি রয়েছে। কোথা থেকে তাঁরা ভারতে ঢুকলেন, কীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলেন, তার কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের উত্তর অস্পষ্ট এবং পরস্পরবিরোধী হওয়ায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
দিল্লির বিস্ফোরণের পর গোটা দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে আগেই উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ যা অসম, নেপাল ও অন্যান্য সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার কারণে সবসময়ই নজরদারির জায়গায় থাকে সেখানে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাহরাইচের ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বর্তমানে দুই বিদেশিকে নিয়ে তদন্তে নামিয়েছে পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। তাঁদের মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগ, কল রেকর্ড, ভ্রমণ ইতিহাস এবং আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁরা ভারতে এসে কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, এগুলোও বিস্তারিতভাবে যাচাই করছে তদন্তকারীরা।
দুই আটককারীর উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় আরও ঘনীভূত হয়েছে এই কারণে যে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সম্ভাবনা বর্তমানে বহু গুণ বেড়েছে। বিশেষ করে দিল্লির মতো সংবেদনশীল স্থানে বিস্ফোরণের পরে অনুপ্রবেশের ঘটনা নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিকে আরও সতর্ক করেছে। তদন্তকারী সংস্থার এক সদস্য জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা কেবল অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, নাকি কোনও বৃহত্তর নেটওয়ার্কের অংশ সব দিক দিয়েই তদন্ত চলছে।”
বাহরাইচের প্রশাসনও স্থানীয় মানুষকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করেছে। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে টহল বাড়ানো হয়েছে এবং হোটেল, লজ, গেস্টহাউসগুলিতেও বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।
দিল্লির বিস্ফোরণের কারণ ও নেপথ্যের যোগসূত্র এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বহারাইচের এই গ্রেফতার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিশ্বাস, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসতে পারে।


