বাগরাম ঘাঁটি ছাড়তে অস্বীকার, ট্রাম্পকে কড়া জবাব তালিবানের

ফের (Taliban) আন্তর্জাতিক মঞ্চে শোরগোল পড়েছে আফগানিস্তানের বাগরাম এয়ারবেসকে ঘিরে। চার বছর আগে মার্কিন সেনারা যে ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায়, সেটি ফেরত দেওয়া নিয়ে এখন…

Bagram Stays With Us: Taliban Snubs Trump’s Demand for Return

ফের (Taliban) আন্তর্জাতিক মঞ্চে শোরগোল পড়েছে আফগানিস্তানের বাগরাম এয়ারবেসকে ঘিরে। চার বছর আগে মার্কিন সেনারা যে ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায়, সেটি ফেরত দেওয়া নিয়ে এখন নতুন করে বিতর্কের জন্ম হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, বাগরাম ঘাঁটি আমেরিকার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে, অন্যথায় ‘খারাপ কিছু ঘটবে’। এরই মধ্যে কাবুলের বর্তমান শাসক তালিবান প্রশাসনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান ফসিহুদ্দিন ফিত্রাত জানিয়ে দিয়েছেন— বাগরাম এয়ারবেস নিয়ে কোনও রাজনৈতিক সমঝোতা সম্ভব নয়।

বাগরাম আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তরে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় এয়ারবেস। মার্কিন সেনাদের সঙ্গে প্রায় দুই দশকের যুদ্ধে এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সামরিক ঘাঁটি। তালিবানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা হোক বা স্থল অভিযান—সবকিছুর মূল কেন্দ্র ছিল এই বাগরাম ঘাঁটি। ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় এই ঘাঁটিও ছেড়ে চলে যায় আমেরিকা। সেই সময় থেকেই বাগরাম এখন আফগান সরকারের (বর্তমানে তালিবান প্রশাসনের) নিয়ন্ত্রণে।

   

সম্প্রতি ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “যদি আফগানিস্তান বাগরাম এয়ারবেস তাদের কাছে ফেরত না দেয় যারা এটি তৈরি করেছে—আমেরিকা—তাহলে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে!” এই বক্তব্যের পর আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবলমাত্র একটি হুঁশিয়ারি নয়; বরং আফগানিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের নতুন করে উত্তেজনার ইঙ্গিত।

আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান ফসিহুদ্দিন ফিত্রাত অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাগরাম ঘাঁটি নিয়ে কোনওরকম রাজনৈতিক চুক্তি বা সমঝোতার প্রশ্নই নেই। তিনি বলেন, “কিছু লোক রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটি ফিরিয়ে নিতে চাইছে, কিন্তু তা সম্ভব নয়।” তালিবানের এই মন্তব্য কার্যত মার্কিন প্রশাসনের জন্য কড়া বার্তা হিসেবেই ধরা হচ্ছে।

ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির ফলে আফগানিস্তান-আমেরিকার সম্পর্ক আরও একবার সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ আফগানিস্তান বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত হলে দেশের অর্থনৈতিক ও মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

Advertisements

বাগরাম এয়ারবেস নিয়ে এই নতুন বিতর্ক কেবল কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক নতুন সমীকরণকেও সামনে আনছে। একদিকে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে তালিবানের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মন্তব্য অনেকটাই চাপে ফেলে দিতে পারে কাবুল প্রশাসনকে।

আফগানিস্তান বর্তমানে তালিবানের শাসনে থাকলেও, বাগরাম ঘাঁটির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। এটি কেবল একটি বিমান ঘাঁটি নয়, বরং গোটা মধ্য এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তাই এই ঘাঁটি নিয়ে যে কোনও মন্তব্য বা দাবি আন্তর্জাতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

সবমিলিয়ে, বাগরাম এয়ারবেসকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির পর ভবিষ্যতে মার্কিন প্রশাসন কী অবস্থান নেবে, সেটিই এখন দেখার। অন্যদিকে তালিবান প্রশাসনও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা কোনওরকম চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না। ফলে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে এই ইস্যু যে আগামী দিনে বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে, তা বলাই যায়।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News