নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ধর্মগুরু বাগেশ্বর ধাম-এর প্রধান, ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রী। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মন্তব্য ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি “সনাতনীদের গায়ে হাত পড়লে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।”
বাগেশ্বর বাবার বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল হিন্দু সমাজের ঐক্য ও আত্মসম্মান। তিনি বলেন, “ভগবান বজরংবলীর প্রেরণায় আমি এসেছি সনাতন ধর্মকে পুনর্জাগরিত করতে। যতদিন আমি আছি, ততদিন সনাতন সমাজকে জাগিয়ে রাখব, তাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেব।”
নির্দিষ্ট সংখ্যার পর আর পাঠানো যাবে না মেসেজ, কঠোর হচ্ছে WhatsApp
তিনি যোগ করেন, “এখন সময় এসেছে হিন্দু সমাজ এক হয়ে দাঁড়ানোর। কেউ যদি সনাতনীদের গায়ে হাত দেয়, বা তাদের অপমান করে, তবে তা বরদাস্ত করা হবে না। অন্য ধর্মের মানুষ যদি উস্কানি দেয়, তাহলে তাদের ভাষায়ই উত্তর দেওয়া হবে।”
এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কেউ বাগেশ্বর বাবার কথাকে হিন্দু আত্মসম্মানের বার্তা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন, তাঁর এই বক্তব্য সাম্প্রদায়িক বিভাজন বাড়াতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাগেশ্বরের জনপ্রিয়তা এখন একেবারে শীর্ষে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তাঁর বক্তব্য শুধু ধর্মীয় পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং রাজনৈতিক তাৎপর্যও অর্জন করছে। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, “বাগেশ্বর বাবার বক্তব্য সাধারণ ভক্তদের মধ্যে একধরনের আবেগ জাগায়। কিন্তু একইসঙ্গে, এটি রাজনীতির মঞ্চে নতুন এক ‘ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী’ সুরও তৈরি করে।”
এদিকে, বাগেশ্বরের বক্তব্য নিয়ে বিরোধীদের প্রতিক্রিয়াও এসেছে। একাধিক রাজনৈতিক নেতা বলেছেন—“দেশে ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানো উচিত নয়। ধর্ম মানুষকে এক করে, বিভক্ত নয়।”
তবে বাগেশ্বরের ভক্তদের মতে, “তিনি কারও বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন না, বরং হিন্দু সমাজকে জাগিয়ে তুলছেন। তাঁর বক্তব্য আত্মরক্ষার আহ্বান।” সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাগেশ্বর ধামের প্রভাব শুধু ধর্মীয় অঙ্গনেই নয়, সমাজ-রাজনীতিতেও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি বক্তব্য বা ভবিষ্যদ্বাণী ঘিরেই শুরু হয় জনমত, মিডিয়া বিতর্ক, এবং কখনও কখনও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া।
তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, বাগেশ্বর বাবার মতো প্রভাবশালী ধর্মগুরুদের একেকটি মন্তব্যে গোটা দেশের জনমনে আলোড়ন ওঠে। তাঁর সর্বশেষ মন্তব্য “আমি আমার আদর্শ থেকে এক চুল নড়ব না”—হিন্দু সমাজে এক নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।
যে সময় দেশে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি জোরদার হচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে বাগেশ্বর ধামের এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে বড় ইঙ্গিত বহন করছে। এখন দেখার বিষয়—এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিজেদের অবস্থান ঠিক করে, এবং প্রশাসনিক স্তরে এর কী প্রভাব পড়ে।
একজন বাগেশ্বর-অনুসারীর কথায়, “বাবা শুধু ধর্ম নয়, আত্মসম্মানের কথা বলেন। তাঁর ভাষা কখনও কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু এর পেছনে আছে হিন্দু সমাজকে জাগানোর আকাঙ্ক্ষা।” শেষমেশ বলা যায়, বাগেশ্বর বাবার এই হুঁশিয়ারি শুধু একটি ধর্মীয় বক্তব্য নয়, বরং ভারতীয় সমাজে চলমান ধর্ম-রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়ের লড়াইয়ের প্রতিফলন।