অযোধ্যা (Ayodhya Ram Temple) আবারও ঐতিহাসিক ঘনত্বে ভরপুর এক মহতী আচার-অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে চলেছে। আগামী ২৫ নভেম্বর ২০২৫, রাম বিবাহের শুভ তিথিতে রাম জন্মভূমি মন্দিরের প্রধান শিখরে প্রথমবারের মতো পবিত্র পতাকা উত্তোলন করা হবে। এই শুভক্ষণে উপস্থিত থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠান সংক্রান্ত সমস্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে তৎপর।
ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক চম্পত রায় জানান, রাম বিবাহের এই বিশেষ দিনে শিখর পতাকা উত্তোলন অযোধ্যার ধর্মীয় ঐতিহ্যে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তিনি বলেন, “রাম বিবাহ পঞ্চমীর শুভ তিথিতে রাম মন্দিরের গৌরবময় শিখরে পতাকা উত্তোলন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অংশগ্রহণ করবেন এটি আমাদের সকলের জন্য গর্বের।”
প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য ভিআইপিদের সফর উপলক্ষে অযোধ্যা প্রশাসন ইতিমধ্যেই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বড় সংখ্যায় ভক্ত সমাগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চম্পত রায় জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রী দুপুর ২টার আগেই অযোধ্যা ত্যাগ করবেন। যাতে সাধারণ মানুষ বা ভক্তদের কোনোভাবেই অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে সমস্ত বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে।”
শহরের যাতায়াত ব্যবস্থা, ব্যারিকেডিং, স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন সব ক্ষেত্রেই বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে আগত ভক্তদের জন্য বিশ্রাম ও যাত্রাপথে সাহায্যের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
এ বছরের উৎসব আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি বর্ণময় ও আড়ম্বরপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। প্রধান রাম মন্দিরের পাশাপাশি বিভিন্ন দেবদেবীর উপমন্দির যেমন- মহাদেব, গণেশ, হনুমান, সূর্যদেব, মা ভাগবতী, মা অন্নপূর্ণা, শেশাবতার সবকটিই নতুন আলোকসজ্জা, ফুলের তোড়া, ঐতিহ্যবাহী অলঙ্করণে সাজানো হচ্ছে। মন্দির নগরী জুড়ে চলছে রঙিন আলোকসজ্জা, ধ্বনি-বাজনা ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি।
উৎসবের মূল বৈদিক রীতিনীতি সম্পন্ন করবেন অযোধ্যা, কাশী ও দক্ষিণ ভারতের ১০৮ জন আচার্য। তাঁদের নেতৃত্ব দেবেন কাশীর প্রখ্যাত বৈদিক পণ্ডিত গণেশ্বর শাস্ত্রী। পতাকা উত্তোলনের আগে বহু পর্যায়ের যজ্ঞ ও পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
শিখরে যে পতাকা উত্তোলন করা হবে, সেটি হবে গেরুয়া বর্ণের, যার উপর থাকবে সূর্যচিহ্ন যা শক্তি, আলোক, সত্য, ধর্ম ও জ্ঞানকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে। সূর্যবংশীয় ভগবান রামের বীর্য, ন্যায় ও আধ্যাত্মিক শক্তিকে স্মরণ করেই এই পতাকা নির্বাচিত হয়েছে।
রাম মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, মন্দিরের বেশিরভাগ নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে প্রধানত সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে মন্দির প্রাঙ্গণে নতুন গাছপালা, বাগান, আলো ও পথনির্দেশকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “শিখরে পতাকা উত্তোলনের প্রযুক্তিগত দিক অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরা নিজস্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যালোচনা করছেন যাতে অনুষ্ঠানের দিনে কোনো সমস্যা না হয়।”
অযোধ্যার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের কোটি ভক্তও এই মহোৎসবকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বসিত। রাম মন্দিরের প্রথম শিখর-পতাকা উত্তোলন শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বহু বছরের অপেক্ষার পর অযোধ্যা এখন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে।


