হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) ১২টি জেলার মধ্যে পাঁচটির উচ্চভূমি এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য তুষার ধসের সতর্কতা (Avalanche Alert) জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। এই সতর্কতা বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে, যা রাজ্যের পর্যটন ও স্থানীয় জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। চণ্ডীগড়ের ডিফেন্স জিওইনফরমেটিক্স রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট (ডিজিআরই) চম্বা, লাহৌল ও স্পিতি এবং কিন্নর জেলার উচ্চভূমি এলাকায় (২,৯০০ মিটারের ওপরে) তুষার ধসের জন্য কমলা সতর্কতা (অনিরাপদ অবস্থা) জারি করেছে। এছাড়া, কুল্লু জেলার জন্য হলুদ সতর্কতা (আংশিক অনিরাপদ অবস্থা) এবং শিমলা জেলার জন্য সবুজ সতর্কতা (বিচ্ছিন্ন অস্থিরতা) ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাজ্যের আবহাওয়া মূলত শুষ্ক ছিল। তবে, অটল টানেল, রোটাং এবং লাহৌল ও স্পিতির কাছাকাছি এলাকায় হালকা তুষারপাত দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে লাহৌল ও স্পিতি পুলিশ যাত্রীদের সতর্ক থাকার এবং আবহাওয়ার সর্বশেষ খবর জানতে পরামর্শ দিয়েছে। রাস্তা যদিও যান চলাচলের জন্য খোলা রয়েছে, তবু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উত্তর পোর্টাল থেকে সমস্ত পর্যটকদের ৪×৪ গাড়িকে মানালির দিকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Also Read | কমিশনের এপিক-আধার সংযোগের সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের সতর্কবার্তা
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতি ও শুক্রবার লাহৌল ও স্পিতি, কিন্নর এবং চম্বা, কাংড়া ও কুল্লু জেলার উঁচু এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে হালকা বৃষ্টি ও তুষারপাত হতে পারে। এই পূর্বাভাসের কারণে স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটকদের মধ্যে সতর্কতা বাড়ছে। রাজ্যের শীতলতম স্থান কিলং-এ রাতের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে সিরমৌর জেলার ধৌলাকুয়ানে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তুষার ধসের সতর্কতা: কারণ ও প্রভাব
হিমাচল প্রদেশের উচ্চভূমি এলাকায় তুষার ধসের ঝুঁকি সাধারণত তুষারপাত এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বৃদ্ধি পায়। ডিজিআরই-এর সতর্কতা অনুযায়ী, চম্বা, লাহৌল ও স্পিতি এবং কিন্নরের উচ্চভূমিতে পরিস্থিতি অনিরাপদ হতে পারে। এই এলাকাগুলোতে ভারী তুষারপাতের সম্ভাবনা এবং ঢালু ভূমির অস্থিরতা তুষার ধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। কুল্লুতে আংশিক অনিরাপদ অবস্থা থাকলেও, শিমলায় পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সবুজ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
লাহৌল ও স্পিতি পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যাত্রীদের সতর্ক থাকতে এবং আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য জানতে হবে। অটল টানেলের কাছে হালকা তুষারপাত হয়েছে, তাই সতর্কতা হিসেবে পর্যটকদের মানালির দিকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এই সতর্কতা পর্যটন শিল্পের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ মার্চ মাসে অনেক পর্যটক হিমাচলের তুষারাবৃত পাহাড় উপভোগ করতে আসেন।
হিমাচলের আবহাওয়া ও জনজীবন
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলেও, অটল টানেলের কাছে হালকা তুষারপাত স্থানীয় জনজীবনে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। আগামী দুই দিনে লাহৌল ও স্পিতি, কিন্নর এবং চম্বার উঁচু এলাকায় হালকা বৃষ্টি ও তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে, নিম্নাঞ্চলে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে উষ্ণ রয়েছে। ধৌলাকুয়ানে দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা রাজ্যের বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ার নিদর্শন।
কিলং-এর মাইনাস ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উচ্চভূমি এলাকার কঠিন পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। এই শীতল তাপমাত্রা এবং তুষারপাত তুষার ধসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে আগামী দিনগুলোতে রাজ্যের উচ্চভূমিতে তুষারপাত ও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তুষার ধস
তুষার ধসের ঝুঁকি হিমাচলের মতো পার্বত্য রাজ্যে নতুন নয়। ইতিহাসে বড় বড় তুষার ধসের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যেমন মাউন্ট এভারেস্টে ১৯৯৬ এবং ২০১৫ সালের বিপর্যয়। ১৯৯৬ সালে এভারেস্টে একটি ভয়াবহ তুষার ধস পর্বতারোহীদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছিল। আবার ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পের পর তুষার ধসে অনেক প্রাণহানি ঘটে। হিমাচলেও অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় জনজীবন ও পর্যটনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান সতর্কতা এই ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়।
প্রশাসন ও জনগণের জন্য পরামর্শ
লাহৌল ও স্পিতি পুলিশ এবং আবহাওয়া দফতর স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে অটল টানেল ও রোটাং-এর মতো এলাকায় যাতায়াতের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, “রাস্তা খোলা থাকলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য মানালির দিকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এছাড়া, জেলা প্রশাসনকে পরিস্থিতি নজরে রাখতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তুষারপাতের কারণে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য এই সতর্কতা তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, শুষ্ক আবহাওয়া ফিরে না আসা পর্যন্ত সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও প্রস্তুতি
আগামী দুই দিনে হালকা বৃষ্টি ও তুষারপাতের পূর্বাভাসের কারণে হিমাচলের উচ্চভূমি এলাকায় তুষার ধসের ঝুঁকি থাকবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। তবে, তার আগে পর্যন্ত প্রশাসন ও জনগণের সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটকদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে।
হিমাচল প্রদেশের পাঁচ জেলায় তুষার ধসের সতর্কতা রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর ঝুঁকির দিকটিও তুলে ধরেছে। চম্বা, লাহৌল ও স্পিতি, কিন্নর, কুল্লু এবং শিমলার উচ্চভূমিতে জারি করা এই সতর্কতা স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়া দফতর ও পুলিশের পরামর্শ মেনে চললে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। হিমাচলের এই পরিস্থিতি আগামী দিনে কীভাবে পরিবর্তিত হয়, সেদিকে সবার নজর থাকবে।