অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে শুক্রবার এক ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাত এক হামলাকারী তলোয়ার দিয়ে মন্দিরের অভ্যন্তরে উপস্থিত তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমণ চালালে অন্তত পাঁচজন আহত হন। ঘটনার পর হামলাকারীকে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং আহতদের গুরু রামদাস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীর নাম জুলফান এবং সে শ্রী গুরু রামদাস সারাইয়ের ভিতরে তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমণ চালায়। এই সারাইটি মন্দিরের একটি থাকার জায়গা যেখানে তীর্থযাত্রীরা বিশ্রাম নিতে আসেন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর এবং তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রabandhak কমিটির (SGPC) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত জুলফানকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। SGPC এর কর্মকর্তা কটওয়ালি SHO সারমেল সিং বলেন, “স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে একটি সংঘর্ষ ঘটে এবং উভয় পক্ষের লোকজন আহত হন। SGPC এর কর্মীরা আহত হয়েছেন। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এখন পর্যন্ত জানা গেছে, হামলাকারী জুলফানকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তবে কী কারণে হামলা ঘটেছিল তা এখনও পরিষ্কার নয়, তদন্ত চলছে।
ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে একজন গুরুতর অবস্থায় গুরু রামদাস হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং তাকে সেলাই করা হয়েছে। গুরু রামদাস হাসপাতালের চিকিৎসক ড. জাসমিত সিং ANI কে জানান, “আমাদের কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে বলা হয়েছে, অজ্ঞাত এক ব্যক্তি আক্রমণকারীর হাতে একটি রড ছিল। মোট পাঁচজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর এবং তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। তার সেলাই করা হয়েছে এবং তিনি স্থিতিশীল হলে সিটি স্ক্যান করা হবে। অন্যান্য চারজন স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন।”
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সহিংসতার ইতিহাস নতুন নয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে, পাঞ্জাবের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদলও স্বর্ণমন্দিরে সেবা করতে গিয়ে হত্যার চেষ্টা থেকে বাঁচেন। সেই হামলার সময় বন্দুকধারী নারায়ণ সিং চৌরা স্বর্ণমন্দিরের কাছে উপস্থিত ছিলেন। তবে, একটি সহকারী তাঁকে বাধা দিলে তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হন এবং নিরাপদে পালিয়ে যান।
এই হামলাটি ছিল ২০০৪ সালে চণ্ডীগড়ের বুরাইল জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চৌরার যুক্ত থাকার অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা ছিল এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের ধরপাকড়ের বাইরে ছিলেন।
স্বর্ণমন্দির, যা ভারতের অন্যতম ধর্মীয় স্থান এবং শিখ ধর্মের প্রধান পবিত্র স্থল, সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বদা কঠোর থাকে। তবুও, গত কিছু বছর ধরে এই ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটে আসছে, যা মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত দেয়। কর্তৃপক্ষ মন্দিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলছে, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।
এ ঘটনার পর মন্দির কমিটি এবং পুলিশ সঙ্গী হয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনরায় পর্যালোচনা করার কথা জানিয়েছে। শিরোমণি গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটি (SGPC) জানিয়েছে, “আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করব যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি না ঘটে।”
এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ জানিয়েছে যে, তারা দ্রুত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং জনগণকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেছে। পুলিশ বর্তমানে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে হামলার ঘটনায় সমাজে একটি বড় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যদিও এই ঘটনায় এখনও তদন্ত চলছে, তবে তা স্পষ্ট যে, মন্দিরে হামলা করাটা শুধু একজন বা এক দলের কাজ নয়, এটি একটি বড় চক্রান্তের অংশ হতে পারে। এভাবে ধর্মীয় স্থানগুলোতে সহিংসতার ঘটনা শুধুমাত্র দেশের শান্তি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।