অসমের ইন্টারনেট সেনসেশন রাকু দা৷ প্রকৃত নাম রাজকুমার ঠাকুরিয়া (Raku Da) ৷ তিনি আবারও শিরোনামে। তবে এ বার তাঁর গান বা ব্যতিক্রমী ভিডিওর কারণে নয়, বরং এক চীনা ফুড ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
ত্রিমঝরের নিকটবর্তী রঙ্গমাটি বিজয়নগরে জন্মগ্রহণ করা এই তরুণ শিল্পী গত কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অনন্য উপস্থিতির কারণে ভাইরাল সেনসেশন হয়ে উঠেছেন। তাঁর ভিডিওতে এক অদ্ভুত আকর্ষণ, ভিন্নধর্মী অভিব্যক্তি ও সীমাহীন আত্মবিশ্বাস দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। সেই জনপ্রিয়তাকেই এবার কাজে লাগিয়েছে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান।
বিজ্ঞাপনে নতুন অবতারে রাকু দা (Raku Da)
সাম্প্রতিক এক বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছে, রাকু দা একটি ফুড প্রোডাক্ট—সম্ভবত “নিউট্রিশিয়াস প্যানকেক” বা “কুইক প্যানকেক মিক্স”—প্রচার করছেন। সেখানে তাঁর স্বকীয় ভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি এবং সরল অথচ শক্তিশালী উপস্থিতি ব্র্যান্ডটিকে এক অন্যরকম মাত্রা দিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিজ্ঞাপন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনুরাগীরা একে “ভাইরাল স্বর্গে আবদ্ধ মিলন” (match made in viral heaven) বলে উল্লেখ করেছেন।
শিল্পী থেকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর
রাকু দার (Raku Da) নাম যদিও মূলত তাঁর অদ্ভুতুড়ে মিউজিক ভিডিওর জন্য ছড়িয়ে পড়েছিল, তিনি সবসময়ই ছিলেন পরীক্ষামূলক। নানা সময়ে তিনি অপ্রচলিত শব্দ, সুর এবং ভিজ্যুয়াল ব্যবহার করে দর্শকদের চমকে দিয়েছেন। এবার সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি বাণিজ্যিক জগতে প্রবেশ করলেন।
একজন অনুরাগীর মন্তব্যই যেন এই সাফল্যের সারকথা বলে দেয়: “He isn’t here to meet expectations; he’s here to bypass them entirely.”
বাংলায় যার অর্থ—তিনি কারও প্রত্যাশা পূরণ করতে আসেননি, বরং সেই প্রত্যাশাকেই একেবারে অতিক্রম করে গিয়েছেন।
জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পরিসরে আঞ্চলিক শিল্পীরা
রাকু দার (Raku Da) এই সাফল্য আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে ভারতের আঞ্চলিক শিল্পীরাও এখন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের নজরে আসছেন। শুধু রাকু দা নন, সম্প্রতি কর্ণাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা কিচ্ছা সুদীপ-এর সাথেও এক রকম ঘটনা ঘটেছে।
একটি জাপানি চিউইং গাম ব্র্যান্ড তাঁর ছবি ব্যবহার করায় আলোচনার ঝড় ওঠে। সুদীপ পরে টুইটারে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই পুরনো বিতর্কের তুলনা করছেন। মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে ব্রিটিশ ফুটবলার জন টেরি-র ছবি যখন ভারতের এক সিগারেট প্যাকেটে অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল, তখনও একইরকম চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল।
অসমের গর্ব রাকু দা
অসম বরাবরই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। তবে বিশ্বমঞ্চে আঞ্চলিক শিল্পীদের উঠে আসা তুলনামূলকভাবে বিরল। রাকু দার (Raku Da) এই আন্তর্জাতিক প্রচার তাই কেবল একটি হালকা খবর নয়, বরং রাজ্যের জন্য গর্বের।
এটি প্রমাণ করছে যে অসমের তরুণ প্রজন্ম কেবল গান বা লোকসংস্কৃতির মাধ্যমেই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ার সৃজনশীল ব্যবহারের মাধ্যমেও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাচ্ছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
রাকু দার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। তাঁর অনুরাগীরা এখনই আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার অপেক্ষায়। অনেকের বিশ্বাস, তিনি শীঘ্রই অন্য ব্র্যান্ডের সাথেও চুক্তিবদ্ধ হবেন। এদিকে বিজ্ঞাপন জগতেও তাঁর স্বকীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এমনকি, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে রাকু দা হয়তো আগামী দিনে ভারতের আঞ্চলিক প্রতিভাদের জন্য এক নতুন পথ তৈরি করে দেবেন—যেখানে সৃজনশীলতা এবং স্বকীয়তাই বড় অস্ত্র হবে।
চীনা ফুড ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন যাত্রা শুরু করলেন অসমের এই ভাইরাল সেনসেশন। রাকু দার গল্প কেবল একজন শিল্পীর ব্যক্তিগত উত্থান নয়, বরং ভারতের আঞ্চলিক সংস্কৃতির বৈশ্বিক স্বীকৃতির প্রতীক। অসমবাসীর কাছে তিনি এখন শুধু স্থানীয় হিরো নন, বরং রাজ্যের সাংস্কৃতিক দূতও বটে।