জোরহাটে উঠবে জুবিন গার্গের স্মৃতিসৌধ, অসমে বাড়ল শোককাল

অসমবাসী তথা সমগ্র উত্তর-পূর্বের মানুষকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে কিংবদন্তি গায়ক ও সংগীত পরিচালক জুবিন গার্গের (Zubeen Garg) অকালমৃত্যু। শুক্রবার সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করার সময় হৃদরোগে…

zubeen garg death mystery

অসমবাসী তথা সমগ্র উত্তর-পূর্বের মানুষকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে কিংবদন্তি গায়ক ও সংগীত পরিচালক জুবিন গার্গের (Zubeen Garg) অকালমৃত্যু। শুক্রবার সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি প্রয়াত হন। মাত্র ৫২ বছর বয়সে এই জনপ্রিয় শিল্পীর প্রয়াণ গোটা দেশকে শোকস্তব্ধ করেছে। তাঁর মৃত্যুতে অসম সরকার থেকে সাধারণ মানুষ— সকলেই গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

Advertisements

রবিবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় শিল্পী জুবিন গার্গের অবদান অসামান্য। তাঁর স্মৃতিকে চিরজীবন্ত রাখতে জোরহাটে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হবে।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, কামরূপ (মেট্রো) জেলার হাতিমুরা, কামারকুচি এনসি গ্রামে দশ বিঘা জমিতে শিল্পীর স্মৃতিতে বিশাল স্মারক নির্মাণ হবে। পাশাপাশি, জুবিন গার্গের অস্থি জোরহাটে নিয়ে গিয়ে সেখানেও একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হবে।

Advertisements

অসম সরকার ঘোষণা করেছে, রাজ্যজুড়ে শোককাল বাড়ানো হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরই সম্পন্ন হবে শিল্পীর শেষকৃত্য। শোকাহত ভক্তদের আবেগের কথা মাথায় রেখে সরকার গৌহাটির ভোগেশ্বর বড়ুয়া স্টেডিয়াম সারারাত জনসাধারণের জন্য খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, “অসংখ্য ভক্ত আমাদের কাছে অনুরোধ করেছেন, যাতে তাঁরা জুবিনকে শেষবার দেখতে পারেন। তাই রাতভর মরদেহ রাখা হবে। এছাড়া সোমবার সাৰুসজাই স্টেডিয়ামেও রাখা হবে, যাতে সকলে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন।”

রবিবার ভোরে শিল্পীর মরদেহ গৌহাটি পৌঁছলে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। ভক্তদের কান্নায় ও অশ্রুসিক্ত আবেগে চারিদিক ভারী হয়ে ওঠে। স্ত্রী গারিমা সাইকিয়া গার্গকে ভেঙে পড়তে দেখা যায় স্বামীর মরদেহ গ্রহণের সময়। ভক্তদের চোখে-মুখে শুধু একটাই বেদনা— অসম হারাল তার সাংস্কৃতিক নক্ষত্রকে।

জুবিন গার্গ কেবল গায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন অসমের সাংস্কৃতিক প্রতীক। তাঁর গান, সুর, সিনেমা এবং সমাজসেবামূলক কাজ তাঁকে জনমানসে এক অমর আসনে বসিয়েছে। তাই রাজ্য সরকার ও তাঁর পরিবার একযোগে স্থির করেছেন— শিল্পীর স্মৃতি ধরে রাখতে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ গড়া হবে।

উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে উত্তর-পূর্ব ভারত উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জুবিন গার্গ। সেই সফরেই ঘটে গেল এই অঘটন। তাঁর মৃত্যুতে অসমের সংগীত দুনিয়া এমন এক শূন্যতার মুখে দাঁড়াল, যা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, “জুবিন শুধু একজন গায়ক ছিলেন না। তিনি ছিলেন অসমের আত্মা। আমাদের দায়িত্ব তাঁর অবদানকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তাই স্মৃতিসৌধ তাঁর নামের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান।”

ভক্তমহলের বক্তব্য, জুবিন গার্গের গান আগামী দিনেও তাঁদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। তবে তাঁর স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠলে তা হবে সাংস্কৃতিকভাবে অমূল্য এক সম্পদ। অসম আজ একটাই বার্তা দিচ্ছে— “জুবিন নেই, কিন্তু তিনি আমাদের হৃদয়ে চিরন্তন।”