অসমে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩৬

অসমে বন্যা (Assam Floods) পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যদিও অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে বন্যার প্রভাব কিছুটা কমেছে। বৃষ্টি, বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে ছয়টি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে মৃত্যুর…

Assam Floods Worsen, Northeast Death Toll Rises to 36

অসমে বন্যা (Assam Floods) পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যদিও অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে বন্যার প্রভাব কিছুটা কমেছে। বৃষ্টি, বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে ছয়টি উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩৬-এ পৌঁছেছে। সোমবার অসম এবং অরুণাচল প্রদেশে আরও দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার ফলে ২৯ মে থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টি ও বন্যার ঘটনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৬-এ দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের মতে, এই ৩৬ জনের মধ্যে অসমে ১১ জন, অরুণাচল প্রদেশে ১০ জন, মেঘালয় এবং মিজোরামে ৬ জন করে, ত্রিপুরায় ২ জন এবং নাগাল্যান্ডে ১ জন মারা গেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা বন্যা ও ভূমিধসের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অসমে বন্যার তীব্রতা
অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (ASDMA) রিপোর্ট অনুসারে, রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ২২টি জেলায় ৫.১৫ লক্ষের বেশি মানুষ এই বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কবলে পড়েছেন। ১২৫৪টি গ্রামে ১২,৬১০.২৭ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে ১,৮৫,৩৮৯ জন মানুষ, যার মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে, ৪৭৯টি ত্রাণ শিবির এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কাছাড় জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে ১.০৩ লক্ষ মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন। ব্রহ্মপুত্র নদী জোরহাটের নেমাটিঘাটে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে, এবং এর উপনদী বুঢ়িদিহিং, ধানসিরি এবং কোপিলি, সঙ্গে বরাক উপত্যকার কয়েকটি নদীও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

   

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা করে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস পেয়েছেন। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস সহ একাধিক সংস্থা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। গুয়াহাটিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারণে অনেক এলাকা দ্বিতীয় দিনের মতো ডুবে রয়েছে, এবং ত্রাণকর্মীরা আটকে পড়া বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

অরুণাচল প্রদেশে ভূমিধস ও বন্যা
অরুণাচল প্রদেশে অবিরাম মৌসুমী বৃষ্টির কারণে বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১০-এ পৌঁছেছে। সোমবার লোহিত জেলার লাসা পানিতে গুপ্তজিৎ ভারালির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যিনি উপরের দিগারুতে সুখা নালার বন্যায় ভেসে গিয়েছিলেন। রাজ্যের জরুরি অবস্থা কেন্দ্র (SEOC) জানিয়েছে, ২৩টি জেলার ১৫৬টি গ্রামে ৯৩৮ জন মানুষ এই বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কবলে পড়েছেন। পশ্চিম কামেং, কামলে, লোয়ার এবং আপার সুবানসিরি, পাপুম পারে, দিবাং ভ্যালি, লোয়ার দিবাং ভ্যালি, লোহিত, চাংলাং, ক্রা দাদি, কুরুং কুমে এবং লংডিং জেলায় বন্যা ও ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে।

রাজ্যপাল কে টি পারনাইক জনগণকে বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জেলা প্রশাসনকে রাতের বেলা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে এবং জনগণকে সচেতন রাখতে সক্রিয় যোগাযোগের উপর জোর দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৪ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন।

Advertisements

মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ড
মেঘালয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ভূমিধস, ডুবে যাওয়া এবং বজ্রপাতের ঘটনা রয়েছে। চেরাপুঞ্জি এবং মাউসিনরামে একদিনে ৪৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের এলাকা হিসেবে পরিচিত। মিজোরামে ছয়জন মারা গেছেন, যার মধ্যে একটি হোটেল ভূমিধসে ধসে পড়ায় তিনজন মায়ানমারের নাগরিক ছিলেন। ত্রিপুরায় দুজন এবং নাগাল্যান্ডে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ত্রিপুরায় অসম রাইফেলস ১ জুন থেকে চন্দ্রপুর এবং রেশম বাগান এলাকায় উদ্ধার কাজ শুরু করেছে, যেখানে ১,৩০০-এর বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, এই রাজ্যগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে।

মণিপুরে বন্যার প্রভাব
মণিপুরে ইম্ফাল পূর্ব এবং ইম্ফাল পশ্চিম জেলায় নদীর তীর ভেঙে যাওয়া এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ১৯,৮১০-এর বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত চার দিনে ৩,৩৬৫টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৪৭টি ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। ইম্ফাল নদী খুরাই, হেইঙ্গাং এবং চেকন এলাকায় উপচে পড়ায় অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন অল ইন্ডিয়া রেডিও ইম্ফাল কমপ্লেক্স এবং জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (JNIMS), জলমগ্ন হয়েছে। JNIMS থেকে অনেক রোগীকে অন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৩১টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে, যার বেশিরভাগ ইম্ফাল পূর্ব জেলায়।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অসমের হাইলাকান্দি এবং শ্রীভূমি জেলায় এবং ত্রিপুরার খোয়াই এবং পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা ও ভূমিধস পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে উঠেছে, অসমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ৩৬ জনের মৃত্যু এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এই অঞ্চলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চললেও, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। জনগণকে সতর্ক থাকতে এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ এবং জনগণের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।