অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার জানিয়েছেন যে রাজ্যের শ্রীভূমি জেলা দিয়ে মোট ১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে (Illegal Infiltration) তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শ্রীভূমি পুলিশ সম্প্রতি দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে তাদের ফেরত পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এক্স-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, “অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কড়া নজর রেখে @sribhumipolice
দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে পিছনে ঠেলে দিয়েছে।” এই ঘোষণা অসমে সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অবৈধ অভিবাসন রোধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন।
অসমের শ্রীভূমি, কাছাড়, ধুবড়ি এবং দক্ষিণ সালমারা-মানকাচর জেলাগুলি বাংলাদেশের সঙ্গে ২৬৭.৫ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানা ভাগ করে। এই সীমান্তের বেশিরভাগ অংশই নদী দিয়ে গঠিত, যা এর ভৌগোলিক প্রকৃতির কারণে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য একটি সংবেদনশীল এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে অসমে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই ইস্যুতে কঠোর হাতে দমন করার নীতি গ্রহণ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন যে তাঁর প্রশাসন অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।
Also Read | মহাকুম্ভে মৃত্যুমিছিল! সেনাকে দায়িত্ব নয় কেন? যোগী প্রশাসনকে তুলোধোনা আখড়ার সন্তদেরভিড়ের ধাক্কাধাক্কি, বেরনোর পথ ছিল না! ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শোনালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
২০২৫ সালের এই সময়ে, যখন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা চলছে, অসম সরকারের এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীভূমি পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানে দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছিল, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল। তাদের পরিচয়পত্র যাচাই করে এবং প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে আরও ১৩ জনকে একইভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা মোট সংখ্যাকে ১৫-তে নিয়ে গেছে। এই ঘটনাগুলি সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে।
অসমের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে পুলিশ এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) যৌথভাবে কাজ করছে। গত বছর থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে ড্রোন, নাইট ভিশন ক্যামেরা এবং অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখতে বদ্ধপরিকর। যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করবে, তাদের কঠোরভাবে ফেরত পাঠানো হবে।” তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপগুলি রাজ্যের নিরাপত্তা এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য অপরিহার্য।
এই ঘটনা রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অসমে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে আগত অভিবাসীরা স্থানীয় জনসংখ্যা এবং সংস্কৃতির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি একটি মানবিক সমস্যা, যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা জরুরি। তবে, শর্মা সরকারের অবস্থান স্পষ্ট—অবৈধভাবে প্রবেশকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ সঠিক। আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত না থাকলে দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন হবে।” আরেকজন লিখেছেন, “এটা শুধু ফেরত পাঠানোর সমাধান নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলে মূল সমস্যার সমাধান করা উচিত।” এই আলোচনা অসমে অভিবাসন নিয়ে চলমান উত্তেজনাকে আরও প্রকট করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সীমান্তে শুধু পুলিশি ব্যবস্থা বাড়ালে সমস্যার সমাধান হবে না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেককে সীমান্ত পার করতে বাধ্য করছে। অসমে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এছাড়া, সীমান্তে বেড়া নির্মাণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার আরও জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা অসমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জটিলতাকেও তুলে ধরে। ২০২৫ সালে এই সময়ে, যখন দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা চলছে, অসম সরকারের এই কঠোর অবস্থান অনেকের নজর কেড়েছে। ভবিষ্যতে এই সমস্যা সমাধানে আরও বড় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।