অসম: অসমের জনপ্রিয় গায়ক ও সাংস্কৃতিক আইকন জুবিন গার্গের (Zubeen Garg) আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত। গায়কের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে অসম সরকার। এই সময় সরকারি স্তরে কোনও বিনোদন, ভোজসভা কিংবা আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে না। তবে স্বাস্থ্য শিবির, ‘নিকষয় মিত্র’ সহায়তা কর্মসূচি এবং বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
গত শুক্রবার সিঙ্গাপুরে এক মর্মান্তিক স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জুবিন গার্গ। তিনি মাত্র ৫২ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি দিলেন। জানা যায়, ডাইভিং করার সময় গুরুতর চোট পান তিনি এবং স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
জুবিন গার্গ সিঙ্গাপুরে তিন দিনের ‘নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যাল’-এ অংশ নিতে গিয়েছিলেন। উৎসবের প্রথম দিনেই ঘটে এই দুঃখজনক ঘটনা, যা মুহূর্তেই আনন্দকে শোকে পরিণত করে।
অসম সরকারের তরফে জারি হওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “শ্রদ্ধেয় জুবিন গার্গের প্রয়াণে অসম সরকার গভীর শোক প্রকাশ করছে। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে। এই সময়কালে কোনও সরকারি ভোজসভা, সাংস্কৃতিক বা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে না। তবে সেবা-সপ্তাহের আওতায় স্বাস্থ্য ও সেবামূলক কার্যক্রম চালু থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জুবিন গার্গের মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গের প্রয়াণে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। তাঁর সুরেলা কণ্ঠস্বর ও সঙ্গীতে অবদান সর্বদা স্মরণীয় থাকবে। পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।”
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মাও শোকপ্রকাশ করে বলেন, “আজ অসম তার প্রিয় পুত্রকে হারাল। মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক, দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা সবসময় আমাদের স্মৃতিতে অমলিন থাকবে।”
২০০৬ সালে গ্যাংস্টার ছবির ‘ইয়া আলি’ গানটির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতি অর্জন করেন জুবিন গার্গ। তবে এর আগেই অসমীয়া সংগীতে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। অসমীয়া, হিন্দি, বাংলা—তিন ভাষাতেই তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। শুধু গায়ক হিসেবেই নয়, চলচ্চিত্র পরিচালনা, সঙ্গীতায়োজন ও নাটকে অভিনয়সহ বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
অসমের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে জুবিন ছিলেন এক প্রিয় মুখ। তাঁর গান যেমন আনন্দ দিয়েছে, তেমনি সমাজসেবামূলক কাজেও তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। তাই তাঁর অকালপ্রয়াণে শুধু সংগীত জগত নয়, সমগ্র অসমবাসী হারাল এক আপনজনকে।
আজ জুবিন নেই, কিন্তু তাঁর সুর, তাঁর সঙ্গীত এবং মানবিকতার ছোঁয়া আগামী প্রজন্মের কাছে এক অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।