অসমে বাল্য বিবাহ (Child Marriage) নির্মূলের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার তৃতীয় দফার অভিযান চালিয়ে নতুন করে ৪১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার রাতে, ২১-২২ ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে এই অভিযান শুরু করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রবিবার এই তথ্য জানান।
তৃতীয় পর্যায়ের অভিযানের পরিসংখ্যান
অভিযানের অধীনে পুলিশ মোট ৩৩৫টি মামলা নথিভুক্ত করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের রবিবার আদালতে পেশ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী এক্স (পূর্বে টুইটার) প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “অসম বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ২১-২২ ডিসেম্বরের রাতে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের অভিযানে ৪১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৩৩৫টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। সমাজের এই কু-প্রথা নির্মূলের জন্য আমরা সাহসী পদক্ষেপ নিতে থাকব।”
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযানের পরিসংখ্যান
অসম সরকার বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযান চালিয়েছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেই সময়ে ৪,৫১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং ৩,৪৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযান চালানো হয় ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে, যেখানে ৭১০টি মামলা নথিভুক্ত করা হয় এবং ৯১৫ জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হন।
অভিযানের লক্ষ্য ও সরকারী বার্তা
অসম সরকার স্পষ্ট জানিয়েছে যে, বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি এবং এটি নির্মূল করার জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, এই ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে এবং সমাজ থেকে এই কু-প্রথা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত রাজ্য সরকার তার অবস্থান থেকে একচুলও সরবে না।
আইন প্রয়োগের কঠোরতা
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই তারা যারা নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে করেছে বা এই ধরনের বাল্য বিবাহে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। রাজ্য সরকার বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করছে এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অভিযানের সামাজিক প্রভাব
বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে নেওয়া এই কঠোর পদক্ষেপ অসমের সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই পদক্ষেপকে প্রশংসা করেছে এবং বলেছেন যে এটি রাজ্যের নারীদের শিক্ষার অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অন্যদিকে, কিছু মানুষ এই ধরনের অভিযানের সময় গ্রামীণ এলাকায় পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সমাজে পরিবর্তনের বার্তা
বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে সরকার এবং সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে, তা শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নয়, বরং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেও অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অসম সরকারের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর অঙ্গীকার
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অসমের এই অভিযান সমাজে নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে যে, বাল্য বিবাহের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো রকম আপস করা হবে না। রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন এই পদক্ষেপকে সফল করার জন্য একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।