ভারতের সিনিয়র লিভিং মার্কেটে আগামী দিনে বড় ধরনের উন্নতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অফ সিনিয়র লিভিং ইন্ডিয়া (ASLI) এবং রিয়েল এস্টেট কনসালট্যান্ট জেএলএল ইন্ডিয়ার একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১৫,০০০ সিনিয়র লিভিং হোম চালু হতে পারে।
যার জন্য আনুমানিক ২৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনসংখ্যা এবং তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তিত চাহিদা এই বাজারের প্রসারের পেছনে প্রধান কারণ।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে প্রবীণ জনসংখ্যা ১৬২.২ মিলিয়ন থেকে ২০৩০ সালে ১৯১.৫ মিলিয়নে পৌঁছবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩৪৬ মিলিয়নে পৌঁছতে পারে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলে সিনিয়র লিভিং সেক্টর ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে ভারতের সংগঠিত সিনিয়র লিভিং মার্কেটে মোট ২২,১৫৭টি ইউনিট রয়েছে, যা ২০১৪ সালে ছিল মাত্র ৭,১৪৭টি। এই সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমান হারে প্রকল্প চালু হলে ১৪,৯০০ ইউনিটে পৌঁছবে।
তবে, ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি এবং নীতিগত সহায়তার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২৫,৫০০ ইউনিটে (৩৯,০০০ কোটি টাকা) এবং সরকারি নীতির আরও সমর্থনে ৩৪,৬০০ ইউনিটে (৫০,১০০ কোটি টাকা) পৌঁছতে পারে।
তবুও, চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান থাকবে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সিনিয়র লিভিং হোমের সম্ভাব্য চাহিদা ১.৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২.৩ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছবে। এই চাহিদা পূরণে বর্তমান সরবরাহ যথেষ্ট নয়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করছে।
এএসএলআই-এর চেয়ারম্যান রাজিত মেহতা বলেন, “ভারতের প্রবীণ প্রজন্ম আগের তুলনায় বেশি আর্থিকভাবে স্বাধীন এবং তারা তাদের স্বর্ণযুগে বিনিয়োগ করছে।” তিনি আরও বলেন, যদিও বর্তমানে ৭০ শতাংশ প্রবীণ এখনও আর্থিকভাবে পরনির্ভর, এই প্রবণতা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
এএসএলআই-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অঙ্কুর গুপ্তা জানিয়েছেন, সিনিয়র কেয়ার ইন্ডাস্ট্রি ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পৌঁছবে, যা প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।
প্রিমাস সিনিয়র লিভিং-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর আদর্শ নারাহারি বলেন, “ভারতের সিনিয়র লিভিং সেক্টর একটি বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রবীণরা এখন তাদের সুখ এবং জীবনযাত্রার মানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। পরিবারগুলি এমন পরিবেশ খুঁজছে যেখানে যত্নের সঙ্গে সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন রয়েছে।”
দক্ষিণ ভারত এই সেক্টরে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যেখানে জাতীয় বাজারের ৬০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কম উর্বরতা হার, দীর্ঘায়ু বৃদ্ধি এবং প্রবাসী ভারতীয়দের (এনআরআই) পিতামাতার উচ্চ উপস্থিতির কারণে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে সিনিয়র লিভিং-এর চাহিদা বেশি। তবে, কলকাতা, পুনে, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কোয়েম্বাটুরের মতো শহরগুলিতেও এই বাজার দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।
প্রিমিয়াম সিনিয়র লিভিং সুবিধাগুলিতে ৮০-৮৫ শতাংশ অকুপেন্সি রেট বজায় রয়েছে, যা এই সেক্টরের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে।রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সিনিয়র লিভিং প্রকল্পগুলির জন্য উচ্চ জমির মূল্য এবং নির্মাণ ব্যয়, সেইসঙ্গে দক্ষ যত্নশীল কর্মীদের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এই সমস্যা মোকাবেলায় শিল্প সংগঠনগুলি সরকারের কাছে জাতীয় নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে, যাতে কম খরচে অর্থায়ন এবং দ্রুত প্রকল্প অনুমোদনের সুবিধা পাওয়া যায়।
মহারাষ্ট্র সরকার ইতিমধ্যে স্ট্যাম্প ডিউটি, জিএসটি এবং পার্কিংয়ে ছাড়ের মতো সুবিধা প্রদান করে সিনিয়র লিভিং নীতি প্রণয়ন করেছে।শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্নীতির পাশাপাশি, সিনিয়র লিভিং মার্কেটের এই প্রবৃদ্ধি ভারতের পরিবর্তিত জনসংখ্যাগত গতিবিধি এবং সমাজের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়।
Realme 15T-এর সামনেই লঞ্চ, 19,990 টাকার ফোনে থাকছে 7000mAh ব্যাটারি ও সেরা ফিচার
কলকাতার মতো শহরে, যেখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলি আলোচনায় থাকে, সিনিয়র লিভিং সেক্টরে বিনিয়োগের সম্ভাবনা স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সেক্টরে প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র প্রবীণদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে না, বরং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করবে।