জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হল শ্রীনগরে এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ বাগান

ডাল লেক এবং জাবারওয়ান পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ গার্ডেন, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন (Srinagar Tulip Garden)৷ বুধবার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।…

Asia’s Largest Tulip Garden Opens in Srinagar – A Must-Visit Spot!

ডাল লেক এবং জাবারওয়ান পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ গার্ডেন, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন (Srinagar Tulip Garden)৷ বুধবার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এই ঘটনা কাশ্মীর উপত্যকায় নতুন পর্যটন মরসুমের সূচনা চিহ্নিত করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই উদ্যানটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।

   

এই টিউলিপ গার্ডেনটি ২০০৭ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখনকার রাজ্যে পর্যটন মরসুম শুধুমাত্র গ্রীষ্ম ও শীতকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই উদ্যানটি স্থাপনের মাধ্যমে পর্যটনের সময়কাল বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, যা বসন্তকালে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। পূর্বে সিরাজ বাগ নামে পরিচিত এই গার্ডেনটি এখন বিভিন্ন রঙের টিউলিপ ফুলের সমারোহে উদ্বোধন করা হয়েছে। ফ্লোরিকালচার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টিউলিপের বাল্বগুলো পর্যায়ক্রমে রোপণ করা হয়েছে, যাতে ফুলগুলো এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে ফুটে থাকে।

Advertisements

নতুন বৈচিত্র্য ও রঙের সমন্বয়

এই বছর ফ্লোরিকালচার বিভাগ উদ্যানে দুটি নতুন জাতের টিউলিপ যোগ করেছে। এছাড়া একটি নতুন রঙের সমন্বয় প্রবর্তন করা হয়েছে, যার ফলে টিউলিপ ও অন্যান্য ফুলের মোট জাতের সংখ্যা বেড়ে ৭৪-এ পৌঁছেছে। টিউলিপ ছাড়াও বসন্তের অন্যান্য ফুল যেমন হায়াসিন্থ, ড্যাফোডিল, মুসকারি এবং সাইক্ল্যামেন এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উদ্যানে প্রায় ১৭ লক্ষ টিউলিপ বাল্ব রোপণ করা হয়েছে, যা ৫৫ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত। উদ্যানটির সম্প্রসারণ প্রায় তার পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছে গেছে বলেও তারা জানান।

উদ্যানের ইতিহাস ও জনপ্রিয়তা

ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু হয়েছিল। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডস থেকে ৫০,০০০ টিউলিপ বাল্ব আমদানি করে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই এটি পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং প্রতি বছর এর পরিধি ও দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর (২০২৪) এই উদ্যানে ৪.৬৫ লক্ষেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। এর আগের বছর, ২০২৩ সালে, দর্শক সংখ্যা ছিল ৩.৬৫ লক্ষ। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, এই উদ্যানটি কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রকৃতির সৌন্দর্য ও পর্যটনের আকর্ষণ

শ্রীনগরের এই টিউলিপ গার্ডেন কেবল ফুলের সমাহার নয়, এটি প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক। ডাল লেকের তীরে এবং জাবারওয়ান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই উদ্যানটি পর্যটকদের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপহার দেয়। বসন্তের শুরুতে যখন টিউলিপগুলো ফোটে, তখন এটি একটি রঙিন কার্পেটে রূপান্তরিত হয়। এই সময়ে কাশ্মীর পর্যটনের শীর্ষ মরসুমে প্রবেশ করে। ফ্লোরিকালচার বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আশা করছি এই বছরও রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এই উদ্যানে আসবেন। নতুন জাত এবং রঙের সমন্বয় দর্শকদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে।”

পর্যটন শিল্পে অবদান

ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এটি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রদর্শনই করে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখে। গার্ডেনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হোটেল, পরিবহন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আয়ও বেড়েছে। এছাড়া, এই উদ্যানটি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্যও একটি প্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য এখানে শুট করা হয়েছে, যা কাশ্মীরের সৌন্দর্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে।

পরিবহন ও সুবিধা

শ্রীনগরে পৌঁছানোর জন্য বিমান, ট্রেন এবং সড়কপথে সুবিধা রয়েছে। শেখ উল আলম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উদ্যানটি প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া শ্রীনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১৮ কিলোমিটার এবং লালচক থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে এটি অবস্থিত। পর্যটকদের জন্য ট্যাক্সি, অটোরিকশা এবং স্থানীয় বাস পরিষেবা উপলব্ধ। গত বছর থেকে পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে দর্শকরা সহজে গাড়ি রাখতে পারেন।

পর্যটকদের জন্য পরামর্শ

টিউলিপ গার্ডেনে ভ্রমণের জন্য বসন্তকাল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত টিউলিপ ফুলগুলো পুরোপুরি ফোটে। তবে এই সময়ে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে, তাই আগে থেকে হোটেল এবং পরিবহন বুকিং করে নেওয়া উচিত। সকালে এবং সন্ধ্যায় শ্রীনগরে ঠান্ডা থাকে, তাই হালকা গরম পোশাক সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। ফটোগ্রাফির জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান, তাই ক্যামেরা বা ভালো মানের ফোন সঙ্গে আনতে ভুলবেন না।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ফ্লোরিকালচার বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছরগুলোতে আরও নতুন ফুলের জাত এবং সুবিধা যোগ করা হবে। এই উদ্যানটি কাশ্মীরকে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে। পর্যটকদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এবং সরকারের উদ্যোগের ফলে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে বিকশিত হতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন শুধু একটি উদ্যান নয়, এটি কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতির একটি জীবন্ত প্রতীক। এই বসন্তে যদি আপনি শ্রীনগর ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তবে এই রঙিন ফুলের সমুদ্র দেখতে ভুলবেন না।