নতুন এক ভূমিকায় আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi) —ভারতের স্বার্থরক্ষায় এবার বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তান বিরোধী প্রচারের দায়িত্ব পেলেন হায়দরাবাদের এই সংসদ সদস্য। অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) দলের নেতা হলেও, এবার তিনি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। সদ্য গঠিত সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের (All Party Delegation) অংশ হিসেবে ওয়াইসি এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় অবস্থান তুলে ধরবেন এবং পাকিস্তান স্পনসর্ড সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলবেন।
সরকারের পক্ষে কথা বলবেন, দলের নয়
মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি স্পষ্টভাবে জানান, “আমি এখানে AIMIM-এর প্রতিনিধি হিসেবে নয়, বরং ভারতের সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করব। আমার কাজ হবে পুরো বিশ্বকে জানানো যে কীভাবে পাকিস্তান আমাদের দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই আন্তর্জাতিক মহল জানুক—পাকিস্তান শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, বরং পুরো মানবতার জন্যই একটি হুমকি। তাদের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ আমাদের দেশের নিরাপত্তার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলছে। ভারত পাকিস্তান স্পনসর্ড টেররিজমের শিকার, এবং এ বিষয়ে এখন স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে।”
সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল ও সরকারের কৌশল
সাম্প্রতিক কালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার আবহে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এক সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর উদ্দেশ্য হলো, আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ ও প্রভাব তুলে ধরা। এই দলের সদস্য হিসেবে ওয়াইসির নাম ঘোষিত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় যেমন ছিল, তেমনি প্রশংসাও এসেছে অনেক দিক থেকে।
ওয়াইসি যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত, তেমনই তিনি বারবার ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই দায়িত্ব তাঁর প্রতি সরকারের আস্থা ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের প্রতিফলন বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক প্রচার অভিযানে জোর
এই প্রতিনিধি দল বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী রাষ্ট্র, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি ও ইউএন-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। সেখানে ভারত যে একাধিকবার সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং তার পেছনে পাকিস্তানের সরকারি বা আধা-সরকারি সমর্থন রয়েছে—এই বার্তা তুলে ধরা হবে।
ওয়াইসি বলেন, “এটা কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিষয় নয়। এটা মানবতার প্রশ্ন। যখন মুম্বই হামলা হয়েছিল, যখন পুলওয়ামা আক্রমণ হয়েছিল, তখন নিহতরা শুধু হিন্দু বা মুসলিম ছিল না—তারা ছিল ভারতীয় নাগরিক। পাকিস্তান এই মানবতা বিরোধী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, আর আন্তর্জাতিক স্তরে তার জবাব দেওয়াটা জরুরি।”
রাজনৈতিক বার্তা ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
ওয়াইসির এই ভূমিকা ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন বার্তা দিচ্ছে। একদিকে তিনি একজন সংখ্যালঘু নেতা, অন্যদিকে দেশের স্বার্থে তিনি সরকারের কৌশলগত প্রচারে অংশ নিচ্ছেন—এটা রাজনৈতিক মেরুকরণের যুগে এক ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই উদ্যোগ সফল হলে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান শক্ত হবে, এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আরও দৃঢ় চাপ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে কেন্দ্র।
ওয়াইসির কথায়, “আমরা চাই বিশ্বের প্রতিটি দেশ জানুক—ভারত শান্তি চায়, কিন্তু তার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস নয়। পাকিস্তানের প্রকৃত চেহারা এখন বিশ্বের সামনে উন্মোচন করা আমাদের দায়িত্ব।”
এই সফরের ফলে ভারত-পাক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানের উপর কী প্রভাব পড়ে, তা দেখার অপেক্ষায় গোটা দেশ।