দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর এবার অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal) ও আম আদমি পার্টির (আপ) সামনে বড় চ্যালেঞ্জ পঞ্জাব। দিল্লির মসনদ খালি করতে হয়েছে আম আদমি পার্টিকে। এই হারের প্রভাব সরাসরি পড়েছে পঞ্জাবে। এবার পঞ্জাবকে বাঁচাতে মাঠে নামলেন কেজরিওয়াল। তিনি তার দলের পরিস্থিতি সামলাতে পঞ্জাবের বিধায়কদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এই বৈঠক পাঞ্জাবের রাজনীতিতে নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে, এমনই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
দিল্লির নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই পঞ্জাবে আপ সরকারের ভিত নড়বড়ে হতে শুরু করেছে। কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছে, পঞ্জাবের আম আদমি পার্টির বেশ কিছু বিধায়ক দলের ভেতরে বিরোধী অবস্থান তৈরি করছেন। এমনকি, তারা দলবদলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও আম আদমি পার্টি এই বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি, তবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল পঞ্জাবের পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।
একটি সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার পর, কেজরিওয়াল পাঞ্জাবের সমস্ত বিধায়কদের ১১ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে জরুরি বৈঠকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকের বিষয়ে কিছু জানানো না হলেও দলের তৎপরতায় স্পষ্ট যে, এটি একটি গুরুতর বিষয়। কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে পঞ্জাবের আপ সরকার ভাঙনের পথে এগিয়ে গেলে, সেটি দলের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। সেক্ষেত্রে দিল্লির পরাজয়ের প্রভাব পাঞ্জাবে যেন বাড়তে না পারে, সে কারণে কেজরিওয়াল আগাম সতর্কতা নিতে চান।
কংগ্রেস সাংসদ সুখজিন্দর সিং রণধাবা গত মাসে এক বক্তব্যে দাবি করেছিলেন, পাঞ্জাবে আপের মধ্যে বিরাট ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, “সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাঞ্জাবকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কমপক্ষে ৩৫ জন বিধায়ক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।” কংগ্রেসের এই দাবি পাঞ্জাবের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিরোধী পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ তোলা হলেও, আপ দল কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এদিকে, দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পাঞ্জাবে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরম আকার ধারণ করেছে। পাঞ্জাবে যদি আপ সরকারের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়, তবে সেটি দলের জন্য বড় ধাক্কা হবে। ৭০ আসনের দিল্লিতে মাত্র ২২টি আসন পাওয়ার পর, দলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি পেয়ে গেছে ৪৮টি আসন। এমন পরিস্থিতিতে, দিল্লির পরাজয়ের প্রভাব পাঞ্জাবেও পড়ছে।
দিল্লিতে শোচনীয় পরাজয়ের পর পাঞ্জাবের পরিস্থিতি কেজরিওয়াল এর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আপ যদি পাঞ্জাবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারে, তাহলে তাদের সামনের রাজনীতির কৌশল ও শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে, এমনটাই দাবী রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
এখন সবকিছু কেজরিওয়ালের হাতে। পাঞ্জাবের পরিস্থিতি যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে এটি আরও বড় রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। কেজরিওয়ালের সামনে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গেছে। পাঞ্জাবের আপ বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে যদি তিনি একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারেন, তবে ভবিষ্যতে দলের রাজনৈতিক স্থিতি সুরক্ষিত থাকবে। তবে, সময় যে খুব বেশি নেই, সেটা পরিষ্কার।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাঞ্জাবে যদি আসলেই দলবদল শুরু হয় তবে তা শুধু আম আদমি পার্টির জন্য নয়, সমগ্র রাজনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। কংগ্রেস এবং বিজেপি পাঞ্জাবে একে অপরকে একে অপরকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত, এমন পরিস্থিতিতে কেজরিওয়ালের জন্য পাঞ্জাবকে ধরে রাখা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।


