ভারতের শীর্ষস্থানীয় সঙ্গীত পরিচালক এবং অস্কারজয়ী শিল্পী এ আর রহমান (AR Rahman) শনিবার রাতে চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, জলশূন্যতা এবং পাকস্থলীর সমস্যার কারণে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে স্বস্তির খবর, ৫৮ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পীর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। রবিবার সকালে তাঁর বোন এ আর রেহানা পিটিআই ভিডিওকে বলেন, “তাঁর জলশূন্যতা এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হয়েছিল। এখন তিনি ভালো আছেন।”
শনিবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করার পর রহমানকে দ্রুত চেন্নাইয়ের একটি কর্পোরেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সূত্রের খবর, তিনি গত কয়েকদিন ধরে তীব্র কাজের চাপে ছিলেন, যার ফলে শারীরিকভাবে ক্লান্তি এবং জলশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়। রেহানা জানান, চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “ভাইয়ের ভক্তদের চিন্তার কিছু নেই। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন।”
এ আর রহমান ভারতীয় সঙ্গীত জগতের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। ২০০৯ সালে হলিউড ছবি ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’-এর জন্য দুটি অস্কার জিতে তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর গান ‘জয় হো’ শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পায়। তামিল, হিন্দি, তেলুগু এবং অন্যান্য ভাষায় তাঁর সুরের জাদু অগণিত শ্রোতার মন জয় করেছে। সম্প্রতি তিনি বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পে কাজ করছিলেন, যার মধ্যে আছে নতুন সিনেমার গান এবং লাইভ কনসার্টের প্রস্তুতি। এই ব্যস্ততার মধ্যেই তাঁর শরীরে সমস্যা দেখা দেয়।
রহমানের স্বাস্থ্য নিয়ে খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁর ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন। একজন ভক্ত লিখেছেন, “আপনার সঙ্গীত আমাদের জীবনের আলো। দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন, স্যার।” আরেকজন লিখেছেন, “এ আর রহমান শুধু একজন সঙ্গীতশিল্পী নন, আমাদের আবেগের ভাষা। তাঁর জন্য প্রার্থনা করছি।” এই ঘটনা তাঁর জনপ্রিয়তা এবং মানুষের মনে তাঁর গভীর প্রভাবের প্রমাণ দেয়।
চিকিৎসকদের মতে, জলশূন্যতা এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রায়ই ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে হতে পারে। রহমানের মতো শিল্পীরা, যাঁরা দিনরাত একটানা কাজ করেন, তাঁদের জন্য এই ধরনের সমস্যা অস্বাভাবিক নয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল পদার্থ দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি কবে ছাড়া পাবেন, সে বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি।
এ আর রহমানের ক্যারিয়ারে তিনি শুধু সঙ্গীত পরিচালকই নন, একজন গায়ক, প্রযোজক এবং লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর কাজ শুধু ভারতীয় চলচ্চিত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, হলিউড এবং আন্তর্জাতিক প্রকল্পেও তাঁর অবদান রয়েছে। তিনি পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী এবং একাধিক জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তাঁর সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি ভাষার সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছেন।
এই ঘটনা সঙ্গীত জগতে একটি আলোড়ন তুললেও তাঁর পরিবার এবং ভক্তরা আশাবাদী যে তিনি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে কাজে ফিরবেন। তাঁর বোন রেহানা, যিনি নিজেও একজন সঙ্গীতশিল্পী, ভক্তদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, “তিনি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। আমরা সবাই তাঁর পাশে আছি।” রহমানের স্ত্রী সায়রা বানু এবং তাঁর সন্তানরাও হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা শিল্পীদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরেছে। ব্যস্ত জীবনে কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম এবং স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। রহমানের ভক্তরা এখন অপেক্ষায় আছেন তাঁর সুস্থতার খবরের জন্য, যাতে তিনি আবার তাঁর সুরের জাদু দিয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করতে পারেন।