নয়াদিল্লি, ২০ নভেম্বর: একের পর এক মাওবাদী বিরোধী অভিযানে পরপর দুই দিন বড় সাফল্য পেল দেশের নিরাপত্তাবাহিনী (Anti-Maoist operation)। মঙ্গলবারের সফল অভিযানের পর বুধবার ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নতিস্বীকার করল মাওবাদী বাহিনী।
অন্ধ্রপ্রদেশের ঘন জঙ্গল থেকে ছত্তিসগড়ের সীমান্ত দুই রাজ্যেই নিরাপত্তারক্ষীরা বড়সড় সাফল্য পেলেও হারাতে হল এক অসীম সাহসী আধিকারিককে। মাওবাদীদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হলেন মধ্যপ্রদেশের হক ফোর্সের ইন্সপেক্টর আশিস শর্মা (৪০) যিনি মাওবাদী দমন অভিযানের মুখ হয়ে উঠেছিলেন গত কয়েক বছরে।
বিহারে ৫ আসন জয়ের পর বাংলাকে টার্গেট এই দলের!
পুলিশ সূত্রে খবর, ছত্তিসগড়–মধ্যপ্রদেশ–মহারাষ্ট্রের ত্রিবেণী সংযোগস্থল কাঙ্ঘুরার ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মাওবাদীদের একটি দল সম্পর্কে আগেই তথ্য আসে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার সকাল থেকেই যৌথ অভিযান শুরু করে তিন রাজ্যের নিরাপত্তাবাহিনী। নেতৃত্বে ছিলেন বালাঘাট জেলার পরিচিত মুখ হক ফোর্সের ইন্সপেক্টর আশিস শর্মা।
বাহিনীর অগ্রগতি টের পেয়ে আচমকাই গুলি চালাতে শুরু করে মাওবাদীরা। প্রচণ্ড গুলির লড়াইয়ের মধ্যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আশিস। ঠিক সেই সময়ই মাওবাদীদের একটি গুলি এসে বিঁধে তাঁর পেটে। আহত অবস্থায়ও সহকর্মীদের সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিয়ে যান তিনি।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় রাজনন্দগাঁওয়ের ডোনগারগড় কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে বড় হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু তার আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বীর আধিকারিক।
মধ্যপ্রদেশের স্পেশাল ডিজি (মাও দমন অপারেশন) পঙ্কজ শ্রীবাস্তব জানান “হক ফোর্সের অন্যতম সেরা ও সাহসী অফিসার ছিলেন আশিস। বহু অভিযান তাঁর নেতৃত্বে সফল হয়েছে। দু’বার gallantry medal পেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি।”
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ছত্তিসগড়ের সুকমা লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের আলুরি সীতারামরাজু জেলায় পুলিশ এনকাউন্টারে খতম হয় মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতা মাদভি হিডমা, তাঁর স্ত্রীসহ চার সহযোগী। এই মৃত্যু মাওবাদী সংগঠনের কোর নেটওয়ার্কে বড় ধাক্কা বলে মনে করছে নিরাপত্তা মহল।
এর পরদিন বুধবার সকালেই শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের অভিযান। অন্ধ্রপ্রদেশের আলুরি সীতারামরাজু জেলার মারেদুমিল্লির জঙ্গলে গুলির লড়াইয়ে খতম হয় তিন মহিলা মাওবাদী-সহ মোট সাতজন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক এবং বিপুল নথি। মধ্যপ্রদেশে ক্রমবর্ধমান মাওবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় বিশেষভাবে তৈরি হয় হক ফোর্স।
বনে–জঙ্গলে জটিল অভিযান পরিচালনায় তাঁদের পারদর্শিতা আগেই নজর কেড়েছিল। ইন্সপেক্টর আশিস শর্মা এই বিশেষ বাহিনীর সবচেয়ে দক্ষ এবং সক্রিয় আধিকারিকদের মধ্যে ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই রাউন্দার জঙ্গলে তিন মহিলা মাওবাদীকে খতম করার সফল অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা এবং প্রমোশন পান তিনি। তাঁর সহকর্মীদের কথায় “মাওবাদী দমনে তিনি ছিলেন আমাদের ফ্রন্টলাইন কমান্ডার। যে কোনও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন হলে সবার আগে নাম লিখিয়ে দিতেন আশিস।”
দুই দিনের অভিযানে মোট ১৩ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর দাবি, দক্ষিণ ছত্তিসগড় থেকে আন্ধ্র প্রদেশ সীমান্তে মাওবাদী কার্যকলাপ ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। তবে আশিস শর্মার মতো অভিজ্ঞ অফিসারের মৃত্যু বাহিনীর কাছে বিরাট ক্ষতি।
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মত “গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক নেতাদের মৃত্যু মাওবাদী সংগঠনের ভবিষ্যৎ কৌশলকে বড়সড়ভাবে দুর্বল করবে।” সংঘর্ষ ও সাফল্যের মাঝেই দেশের মানুষ স্মরণ করছে শহিদ ইন্সপেক্টর আশিস শর্মাকে মাটি ও মানুষের রক্ষায় যিনি নিজের জীবন সমর্পণ করলেন নির্ভীকভাবে।


