মেডিক্যাল ভিসা বাতিলে ক্ষোভ বাড়ছে পাকিস্তানিদের

পাঞ্জাবের আটারি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি (pakistani) নাগরিকদের ভারত ত্যাগের সংখ্যা মঙ্গলবার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দিনটি ছিল পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা মেডিকেল ভিসার বৈধতার…

pakistani are leaving country

পাঞ্জাবের আটারি সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানি (pakistani) নাগরিকদের ভারত ত্যাগের সংখ্যা মঙ্গলবার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দিনটি ছিল পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা মেডিকেল ভিসার বৈধতার শেষ দিন। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এই অঞ্চলের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনাগুলির মধ্যে একটি।

   

সব ধরনের ভিসা বাতিল (pakistani)

গত শুক্রবার, ভারত সরকার পাকিস্তানি (pakistani) নাগরিকদের জন্য জারি করা সব ধরনের ভিসা বাতিল করে, যার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী, কূটনৈতিক এবং অফিসিয়াল ভিসা ছাড়া অন্য সব ভিসা অন্তর্ভুক্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “২৭ এপ্রিল ২০২৫ থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভারতের জারি করা সমস্ত বৈধ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তবে মেডিকেল ভিসা ২৯ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত বৈধ থাকবে।” এর আগে, রবিবার শেষ হয়েছিল স্বল্পমেয়াদী ভিসার বৈধতা।

পাকিস্তানি অধিবাসীদের মতামত

আটারি সীমান্তে পাকিস্তানে (pakistani) ফিরে যাওয়া অনেক নাগরিক ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছেন, বিশেষ করে যারা এখানে পরিবার গঠন করেছেন বা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি নাগরিক সামরিন বলেন, “আমি গত সেপ্টেম্বরে ৪৫ দিনের ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলাম।

এরপর আমি এখানে বিয়ে করি। কিন্তু আমার দীর্ঘমেয়াদী ভিসা এখনও পাইনি। হঠাৎ করেই আমাকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। জঙ্গিদের জিজ্ঞাসা করা উচিত। আমাদের দোষ কী? কেন আমাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে? যাদের এখানে আত্মীয় আছে, তাদের থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত।”

অন্য একজন পাকিস্তানি (pakistani) নাগরিক ইরা, যিনি দশ বছর আগে দিল্লিতে বিয়ে করেছেন, বলেন, “কোভিডের সময় আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আমি একজন নরি (নো অবজেকশন টু রিটার্ন টু ইন্ডিয়া) ভিসাধারী। কিন্তু পহেলগাঁওয়ে হামলার কারণে আমাকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। সেখানে যা ঘটেছে তা একেবারেই ভুল। কিন্তু এর জন্য আমাদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।”

কৃষাণ কুমার নামে আরেকজন পাকিস্তানি নাগরিক, যিনি ৪৫ দিনের পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন, বলেন, “আমরা এখন ফিরে যাচ্ছি। সরকারের উচিত পহেলগাঁও হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। দুই দেশের মধ্যে একতা থাকা উচিত, কারণ অনেক পরিবারের অর্ধেক এখানে এবং অর্ধেক ওখানে। পহেলগাঁওয়ে যা হয়েছে তা ঠিক নয়।”

রাষ্ট্রপুঞ্জে সোচ্চার, পাকিস্তানকে ‘অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য’ বলে বিঁধলেন ভারত

অফিসার অরুণ পাল জানিয়েছেন

আটারি সীমান্তের প্রোটোকল অফিসার অরুণ পাল জানিয়েছেন, গত তিন দিনে ৫৩৭ জন পাকিস্তানি (pakistani) নাগরিক আটারি সীমান্ত দিয়ে ভারত ত্যাগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে ৮৫০ জন ভারতীয় নাগরিক ভারতে ফিরেছেন। শুধুমাত্র রবিবারই ২৩৭ জন পাকিস্তানি তাদের দেশে ফিরেছেন, এবং ১১৬ জন ভারতীয় দেশে ফিরেছেন।

পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনা

পহেলগাঁওয়ে হামলার ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে। এই হামলা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, যেখানে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে ভারত সরকারের ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত অনেক পাকিস্তানি নাগরিকের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, বিশেষ করে যারা ভারতে তাদের জীবন গড়েছেন।

অনেকে এই সিদ্ধান্তকে অন্যায় বলে মনে করছেন। সামরিনের মতো ব্যক্তিরা প্রশ্ন তুলছেন, জঙ্গিদের কার্যকলাপের জন্য সাধারণ নাগরিকদের কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে। ইরার মতো দীর্ঘদিনের বাসিন্দারাও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মানবিক সম্পর্কের উপরও প্রভাব পড়ছে, কারণ অনেক পরিবার দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে, এই পদক্ষেপের ফলে যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাকিস্তানি নাগরিকরা ভারত সরকারের কাছে তাদের কেস পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন, বিশেষ করে যারা এখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন বা যাদের এখানে পরিবার রয়েছে। এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতাকে আরও স্পষ্ট করেছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি কীভাবে সমাধান হবে, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি রয়েছে।