অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার মারেদুমিল্লি অরণ্য এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে তীব্র গুলির লড়াইয়ে তিনজন শীর্ষস্থানীয় মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়েছে৷ বুধবার সকালে এই খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। যৌথ এই অভিযান চালায় অন্ধ্রপ্রদেশের গ্রেহাউন্ড বাহিনী, সিআরপিএফ ও ছত্তীসগঢ় পুলিশ।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন গজারলা রবি ওরফে উদয়, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং অন্ধ্র–ওড়িশা সীমান্ত বিশেষ আঞ্চলিক কমিটির (AOBSZC) সম্পাদক, রাবি ভেঙ্কটা লক্ষ্মী চৈতন্য ওরফে অরুণা, পূর্ব ডিভিশনের সম্পাদক ও বিশেষ আঞ্চলিক কমিটির সদস্য এবং একজন মাওবাদী কর্মী, অনজু, যার পরিচয় পরে নিশ্চিত হয়েছে।
মারেদুমিল্লিতে ২৫ মিনিটের গুলির লড়াই, আরও মাওবাদী পলাতক
অভিযান চালানো হয় আলুরি সীতারাম রাজু (ASR) জেলার কিন্টুকুরু গ্রামের নিকটবর্তী এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, মোট ১৬ জন মাওবাদী ওই এলাকায় জড়ো হয়েছিল বলে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। প্রায় ২৫ মিনিট ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই চলে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও অরণ্যে তল্লাশি অভিযান চলছে, কারণ বাকি মাওবাদীরা সংঘর্ষস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছে বলে খবর।
একই সময় ছত্তীসগঢ়ের সুকমা জেলার সীমান্তবর্তী জঙ্গলে আরেকটি এনকাউন্টারে আরও দুই মাওবাদী নিহত হয়েছেন। সেখানে দুটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কে ছিলেন গজারলা রবি? Andhra Pradesh Maoist Encounter
টেলেঙ্গানার ভূপালাপল্লি জেলার ভেলিশালা গ্রামের বাসিন্দা গজারলা রবি, যিনি ‘উদয়’, ‘গণেশ’ ও ‘বিরুসু’ নামেও পরিচিত, ছিলেন মাওবাদী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা। তার বিরুদ্ধে ২৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা ছিল। প্রায় চার দশক ধরে তিনি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ২০০৪-০৫ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনাতেও অংশ নিয়েছিলেন।
তিনি আগে মালকানগিরি, কোরাপুট এবং শ্রীকাকুলমের মতো অঞ্চলগুলির দায়িত্বে ছিলেন। বিশেষ করে গেরিলা কৌশল ও বিস্ফোরক ব্যবহারে পারদর্শী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। ডায়াবেটিক রোগী হয়েও তিনি দীর্ঘদিন জঙ্গলে সক্রিয় নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন।
অরুণা ও মাওবাদী মহিলা শাখার ভূমিকায় তিনি
নিহত আরেক শীর্ষ নেতা অরুণা, যিনি বিশাখাপত্তনম জেলার কারকভানিপালেমের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ছিলেন নিহত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা চালাপতির স্ত্রী এবং মাওবাদী সংগঠনের নারী শাখা ও সামরিক দিক পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতেন। তাঁর মাথার দাম ছিল ২০ লক্ষ টাকা।
AOBSZC-তে বড় ধাক্কা, পুলিশ জানাল ‘কৌশলগত সাফল্য’
পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর আধিকারিকদের মতে, উদয় ও অরুণার মৃত্যু অন্ধ্র-ওডিশা বর্ডার স্পেশাল জোনাল কমিটি (Andhra-Odisha Border Special Zonal Committee বা AOBSZC)-র পক্ষে বড় ধাক্কা। এই অঞ্চলটি এতদিন মাওবাদীদের অন্যতম সক্রিয় ঘাঁটি ছিল। পুলিশের দাবি, এই এনকাউন্টার AOBSZC-র শীর্ষ নেতৃত্বকে কার্যত নিস্ক্রিয় করে দিয়েছে।
পাশাপাশি, কোয়িলাগুডেম ও কিট্টুকুরু গ্রামের মাঝামাঝি আরও একটি সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে, তবে সেই ঘটনার বিস্তারিত এখনও সামনে আসেনি।
একাধিক রাজ্য মিলিয়ে পরিকল্পিত এই যৌথ অভিযান স্পষ্ট করে দিয়েছে-নিরাপত্তা বাহিনী এখন লক্ষ্য করে একের পর এক শীর্ষ মাওবাদী কমান্ডারদের নিশানা করছে। আর এদিনের ঘটনা, বিশেষত উদয় ও অরুণার মৃত্যু, গোটা মাওবাদী নেটওয়ার্কের জন্য একটি বড় কৌশলগত ধাক্কা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।