বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এর মধ্যেই বিজেপি নেতৃত্বের অন্যতম মুখ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) রাজ্যে আসছেন তিন দিনের সফরে। ১৬ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে তাঁর বিহার সফর। আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে এই সফরকে এনডিএ–র মনোবল বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই তিন দিনে শাহ একাধিক জনসভা, সাংগঠনিক বৈঠক এবং মনোনয়ন র্যালিতে যোগ দেবেন।
এনডিএর তরফে ইতিমধ্যেই আসন বণ্টনের ঘোষণা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) ও বিজেপি—দু’পক্ষই লড়বে ১০১টি আসনে করে। বাকি ৪১টি আসন ভাগ হয়েছে ছোট শরিকদের মধ্যে—চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস) পেয়েছে ২৯টি আসন, জিতন রাম মাঁঝির হিন্দুস্তানী আওয়াম মোর্চা (এইচএএম) ৬টি এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহার রাষ্ট্রীয় লোক মর্চা (আরএলএম) পেয়েছে ৬টি আসন।
বিহার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জয়সওয়াল জানিয়েছেন, “আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এনডিএ–র সব প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হবে। ১৬ অক্টোবর থেকে মনোনয়নপত্র জমা শুরু হবে এবং ১৮ অক্টোবরের মধ্যেই প্রক্রিয়া শেষ হবে। এই সময় রাজ্যে উপস্থিত থাকবেন অমিত শাহজি, যিনি দলের প্রার্থীদের মনোবল বাড়াতে একাধিক সভা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “শাহজি দলের কৌশল নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ভোট প্রচারের রূপরেখা নির্ধারণ করবেন। এই সফর দলের সংগঠনকে আরও ঐক্যবদ্ধ করবে এবং কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্যম জাগাবে।”
দলের শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, অমিত শাহের সফরের সময় বিজেপি ও জেডিইউ প্রার্থীদের সঙ্গে পৃথক মিটিং করা হবে। তিনি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক প্রচার কৌশল, বিরোধী শিবিরের প্রচার মোকাবিলা এবং উন্নয়নমূলক প্রচারণা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। পাশাপাশি, তিনি কয়েকটি বড় জনসভায় অংশ নেবেন, যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়াও জানা গেছে, শাহের সফরের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিহার সফরের পরিকল্পনাও চলছে। দিলীপ জয়সওয়াল বলেছেন, “আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রাজ্যে আসবেন। পাশাপাশি কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও প্রচারে অংশ নেবেন। আমরা আশা করছি, এনডিএ এই নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জিতবে।”
বিহার ভোট হবে দুই দফায়—৬ নভেম্বর ও ১১ নভেম্বর, আর গণনা হবে ১৪ নভেম্বর। ফলে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকেই জোরদার প্রচার শুরু হবে। বিজেপি ও জেডিইউ উভয় দলই সংগঠনকে ভোটমুখী করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে।
বিরোধী পক্ষ, বিশেষ করে রাজদ-কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন, এই সফরকে তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, “অমিত শাহের সফর প্রমাণ করছে যে বিজেপি বিহারের উন্নয়নের বদলে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রচারে জোর দিচ্ছে।” তবে এনডিএ শিবিরের বক্তব্য, “অমিত শাহের উপস্থিতি কর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং সংগঠনকে আরও সুসংহত করবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শাহের সফর বিজেপির জন্য শুধু মনোবল বাড়ানোর উদ্যোগ নয়, বরং এটি ভোটপূর্ব কৌশলগত পর্যালোচনারও অংশ। তাঁর সফরের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে— এনডিএ রাজ্যে ঐক্যবদ্ধ এবং প্রস্তুত।